বুধবার, ১২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাতে তুঘলকি কাণ্ডে সংসদে প্রতিকার চাইল বিরোধী দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘স্বাস্থ্য খাতে তুঘলকি কা-’ শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে সংসদে প্রতিকার চাইলেন সংসদের বিরোধী দল ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার একটি কপি দেখিয়ে তিনি  সংসদে বলেন, টাকার অভাবে অনেক হাসপাতালে মানুষকে সুচিকিৎসা দিতে পারি না। অথচ পত্রিকায় দেখলাম, যেখানে হাসপাতাল নেই, অথচ যন্ত্রপাতি কিনতে জার্মান যাচ্ছে একটি প্রতিনিধি দল। আবার অনেক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করার সুযোগ না থাকায় পড়ে আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, যেসব যন্ত্রপাতি পড়ে আছে, দয়া করে আমাদের দিয়ে দেন। এ বিষয়ে তিনি প্রতিকারের আহ্বান জানান। এর আগে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, দেশে আসলে হচ্ছেটা কী? নির্বাচনের আগে এই সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ছিল দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র। এখন দেখতে পাচ্ছি কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে অনেক টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এত টাকা গেল কোথায়? বলা হচ্ছে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে, তাহলে ব্যাংকের টাকা গেল কোথায়। ঋণের টাকা ফেরত আসছে না। আসলে টাকা যাচ্ছে কোথায় সরকারের সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।

ধর্মমন্ত্রীর পদত্যাগ ও চাঁদ দেখা কমিটি বাতিলের দাবি : এদিকে সংসদের বৈধতা, রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের দাবি, চাঁদ দেখা ইস্যুতে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বাতিল ও ধর্মমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে গতকাল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে প্রথম দিনের সংসদ অধিবেশন। বিএনপিদলীয় দুই এমপির পাশাপাশি এসব ইস্যুতে কড়া বক্তব্য দেন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপিরাও। সব মিলিয়ে গতকাল সংসদ অধিবেশন প্রায় ১০ মিনিট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় ব্যাপকভাবে হৈচৈ করে সরকারদলীয় এমপিরা বিরোধী দলের এমপিদের বক্তব্যকে বাধা দিতে থাকেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বাজেট অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনার সময় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামলাতে স্পিকারকে বার বার এমপিদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাতে দেখা যায়। চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাটসহ বিভিন্ন বিষয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, বিএনপির হারুনুর রশিদ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও সরকারি দলের পঙ্কজ দেবনাথ। বিএনপির এমপি হারুনুর রশিদ ফ্লোর নিয়ে বলেন, প্রথমবার দেশের কোথাও পবিত্র ঈদের (ঈদুল ফিতর) চাঁদ দেখা যায়নি ঘোষণা দিয়ে আবার রাত ১১টায় চাঁদ দেখার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে ঈদের আগেই বিনোদন দিয়েছেন। ধর্ম নিয়ে হেলাফেলা করেছেন। এসব কারণে তিনি সংসদে ধর্মমন্ত্রীর পদত্যাগ ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বাতিলের দাবি জানান। এ সময় সরকারদলীয় সদস্য শেম শেম বলে প্রতিবাদ করতে থাকলে সংসদ কিছুক্ষণের জন্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্পিকার বার বার তাকে বক্তব্য শেষ করার জন্য অনুরোধ জানালেও তিনি বক্তব্য অব্যাহত রাখেন। এ সময় সাময়িকভাবে তার মাইকও বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বালিশ কেনার তুঘলকি কারবার নিয়ে ৩০০ বিধিতে সংসদে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর বিবৃতির দাবি জানান। এদিকে বিএনপির অন্য সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সরকারি দলের এমপিরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। পরে সরকারি দলের তীব্র বিরোধিতার মধ্যে সংসদকে অনির্বাচিত বলে দেওয়া বিএনপির এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বক্তব্য কার্যপ্রণালিবিধির ৩০৭ ধারা মোতাবেক এক্সপাঞ্জ করার ঘোষণা দেন স্পিকার। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, বর্তমান সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। টিআইবিসহ সবাই বলেছে এ সংসদ জনগণের ভোটে হয়নি। তাই খুশি হব এই সংসদের মেয়াদ যেন এক দিনও না বাড়ে। সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। তাকে রাজনৈতিক কারণে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের মিথ্যা মামলার কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা দাঁড়িয়ে ব্যারিস্টার ফারহানার বক্তব্য প্রত্যাহার ও এক্সপাঞ্জের দাবি জানান। পরে স্পিকার আর কাউকে ফ্লোর না দিয়ে দিনের পরবর্তী কার্যসূচিতে প্রবেশ করলে উত্তেজনার অবসান হয়। জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশে মদ-জুয়ার লাইসেন্স দিয়েছিলেন। জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই-শায়খ আবদুর রহমানদের তৎপরতা বিএনপি আমলে দেশবাসী দেখেছে। কিন্তু ঈদে চাঁদ দেখানো নিয়ে জনগণকে ভোগান্তি দেওয়া হয়েছে।

আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বালিশের দাম নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় চলছে। সরকারি দলের পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, জনমতের চাপে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন-লুটপাটের কারণেই এই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর