শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

গন্তব্যহীন বিএনপি

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ছাত্রদল নিয়ে সংকট

মাহমুদ আজহার

গন্তব্যহীন বিএনপি

প্রায় দেড় বছর ধরে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ নিয়ে এখন আর রাজপথের কোনো কর্মসূচি নেই। সামনে কী ধরনের কর্মসূচি আসবে তাও স্পষ্ট করছে না দলটি। এ নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

এর মধ্যে ঈদের এক দিন আগে হঠাৎই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করে দেওয়ায় উত্তেজনা চলছে। এরও প্রভাব পড়েছে বিএনপিতে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন বিলুপ্ত কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতারা। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মারধরের অভিযোগও বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে। দলের স্থায়ী কমিটির আশ্বাসে গতকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টা কর্মসূচি স্থগিত রেখেছেন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। এমনই এক পরিস্থিতিতে আজ বিকালে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে বিকাল সাড়ে ৫টায় এ বৈঠক হবে। লন্ডন থেকে স্কাইপিতে যুক্ত হবেন  দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপিসূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ছাত্রদল ইস্যু ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বৈঠকের পর কর্মসূচি চূড়ান্ত করে তা ঘোষণাও করা হতে পারে। তবে আপাতত জেলায় জেলায় সভাসমাবেশ, মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতেই থাকবে দলটি। এর মধ্যে অক্টোবর-নভেম্বরের ভিতর দলটি কাউন্সিল করতে চায়। এর আগে বিএনপির সাংগঠনিক ৮১টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির কাজও শেষ করতে চায়। এরই মধ্যে কমিটি গঠনের কাজ এগিয়েও চলছে। বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠনও ঢেলে সাজানো হয়েছে। খুব শিগগিরই ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি দেওয়া হবে। এরপর ঢাকা মহানগরীর অসম্পূর্ণ কমিটিও সম্পন্ন করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখন দল গোছানোর কাজ করছি। দল পুনর্গঠন করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে নামব। পাশাপাশি আইনি লড়াইও চলবে। তবে দল গুছিয়ে রাজপথে নামার বিকল্প কোনো পথ নেই। নতুন নির্বাচনের দাবিতেও মাঠে সরব থাকবে বিএনপি।’ বিএনপিসূত্র জানান, সারা দেশে বিএনপি, ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে চাঙ্গা করতে পৃথক কর্মসূচির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সবাইকে দলগতভাবে শক্তি সঞ্চয় করতে বিএনপির পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে সারা দেশে আবারও সাংগঠনিক সফরের কথা ভাবা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে কাউন্সিলের আগে বর্ষা মৌসুমের পরপরই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আবারও জেলা সফর করবেন। সাংগঠনিক এ সফরে তৃণমূলকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি তাদের মতামত নিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সারা দেশেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মতামত নিচ্ছেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, এবারের কাউন্সিলে তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্বের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কারাগারে যাওয়ার আগে দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া নিজেই বলে যান, বিএনপির আগামী দিনের নেতৃত্ব হবে তারুণ্যনির্ভর। বয়স্কদের মতামত নিয়ে তরুণ নেতারা দল পরিচালনা করবেন। অবশ্য বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির তরুণ নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দল পরিচালিত হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামত নিয়ে তিনি দল পরিচালনা করছেন।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোটের সামগ্রিক কর্মকা  দেখভাল করেন তারেক রহমান। প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেন তিনি। এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা কিছুটা নেতিবাচক ভাব দেখলেও পরে সবাই বুঝতে পারেন কেন একাধিক নেতার হাতে মনোনয়ন তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পরও কয়েকটি আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থীই ছিল না। নির্বাচনের পর সরকারের বিরুদ্ধে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে সংসদকে অবৈধ বলে আখ্যা দেয় বিএনপি। বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদে যাবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তারেক রহমানের সিদ্ধান্তেই বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শপথ নিয়ে সংসদে যান।

বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর কঠোর হাতে সংগঠনের লাগাম টেনে ধরেন তারেক রহমান। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন করেছেন তিনি। কৃষক দল, তাঁতী দল, মহিলা দল, ওলামা দল, মৎস্যজীবী দলের নতুন নেতৃত্ব এসেছে। বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাবেও নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এখন পর্যায়ক্রমে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। ঈদের দুই দিন আগে ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব দিতে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে বলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেন, ‘এখন আমরা দল গোছানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। দলের অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন হচ্ছে। বিএনপির সাংগঠনিক অসম্পূর্ণ জেলাগুলোও পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে। এরপর দলীয় কাউন্সিল হবে। আমরা আশা করছি, জাতীয় কাউন্সিলের আগেই বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন। তাকে নিয়েই আমরা কাউন্সিল করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও নতুন নির্বাচনের দাবি আদায় করতে চাই।’

বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বেগম জিয়ার মুক্তির জন্যই দলকে শক্তিশালী করতে হবে। তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা চান কর্মসূচি। কিন্তু বিএনপি হাইকমান্ড বাস্তবতার নিরিখেই কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি, খুব শিগগিরই গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন। নইলে দল গুছিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর