বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের ১০ নেতা

সবাই পাঁচ দিনের রিমান্ডে, আরও তিনজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার কথা ছাত্রলীগের গ্রেফতার ১০ নেতা-কর্মী স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের সোমবার রাতে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। গতকাল প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছে আদালত। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সাদবির ইয়াসির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন। এদিকে গতকাল আবরার হত্যা মামলায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন মনিরুজ্জামান মনির (পানিসম্পদ বিভাগ ১৬তম ব্যাচ), আকাশ (কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ১৬তম ব্যাচ) ও সাদাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ১৭তম ব্যাচ)।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক কিছু চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে আবরারের স্ট্যাটাস এ হত্যার কারণ বলে সোমবার দিনভর বুয়েটের ক্যাম্পাসে আলোচনা ছিল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

আবরারের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে। রবিবার বিকালে বাড়ি থেকে হলে ফেরেন। কয়েক ঘণ্টার মাথায় রাত ৮টার দিকে আবরারসহ দ্বিতীয় বর্ষের সাত-আটজন ছাত্রকে শেরেবাংলা হলের দোতলার ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাত-আটজন নেতা। তারা আবরার ফাহাদের মোবাইল ফোন নিয়ে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখেন। এরপর ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী আসেন। তারা আরেক দফা পেটান আবরারকে। পেটানোর একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন ছাত্রলীগ নেতারা আবরারের হলের সহপাঠীদের ডেকে আনেন এবং তাদের দিয়ে নিথর দেহটি দোতলা ও নিচতলার মাঝামাঝি সিঁড়িতে নিয়ে রাখেন। এরপর ছাত্রলীগ নেতারা বাইরে যান রাতের খাবার খেতে। পরে যখন নিশ্চিত হলো আবরার বেঁচে নেই, তখন সিঁড়ি থেকে লাশ নিয়ে রাখা হয় হলের ক্যান্টিনে। সোমবার ভোরে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। এ ঘটনায় সোমবার রাতে ১৯ জনকে আসামি করে তার বাবা বরকত উল্লাহ ঢাকার চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে রাতেই গ্রেফতার দেখানো হয় বলে জানান লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম। হত্যায় জড়িত সন্দেহে তাদের দুপুরেই আটক করেছিল পুলিশ। গতকাল প্রত্যেককে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারা হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনীক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ), খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ) এবং একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না।

সর্বশেষ খবর