৭ নভেম্বর ছিল কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে জাসদের সমর্থনে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান। এটা মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবসও নয়, অফিসার হত্যা দিবসও নয় এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলও নয়, বিএনপির বিপ্লব ও সংহতি দিবসও নয়; এটা যে সামরিক ক্যু তাও নয়। এটা হচ্ছে হাজার হাজার সিপাহির বিদ্রোহ দিবস। ৭ নভেম্বরের আগে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকা ঘটে। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে দ্বিতীয় সামরিক অভ্যুত্থান হয়। জাতীয় চার নেতাকে জেলে হত্যার ঘটনা ঘটে এবং খালেদ মোশাররফের তত্ত্বাবধানে এবং ব্যবস্থাপনায় ও সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর আত্মস¦ীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক, রশীদ, ডালিমসহ ২৯ জনকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বিমানে করে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে নিরাপদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি গুলি করে হত্যাকারী রিসালদার মুসলেহউদ্দিনও ছিল। খালেদ মোশাররফ সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নামে ক্ষমতা দখল করে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতাচ্যুত করে বন্দী করে নিজেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন। তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাককে দিয়ে নিজেই নিজের পদোন্নতি নেন এবং খন্দকার মোশতাকের যোগসাজশে নিজেই সেনাপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত হন। খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা দখল করে নেন এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে তুমুল বিশৃঙ্খলা তৈরি করে সশস্ত্র বাহিনীকে বিভক্ত করে দেন। ফলে এক সৈনিক আরেক সৈনিকের বিরুদ্ধে অস্ত্র তাক করে বসে। এর ফলে একটি রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খালেদ মোশাররফ তার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য তার অনুসারীদের দিয়ে যখন বল প্রয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তখন একটি রক্তগঙ্গা বয়ে যাওয়ার ও একটি গৃহযুদ্ধের দিকে দেশকে ঠেলে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সাধারণ সৈনিকরা এই গৃহযুদ্ধ ও রক্তাগঙ্গা থেকে নিজেদের বাঁচাতে, উপর্যুপরি অবৈধ ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত থেকে সশস্ত্র বাহিনী ও দেশকে রক্ষা করতে, সাংবিধানিক ধারায় দেশকে ফিরিয়ে নিতে, রাজবন্দীদের মুক্ত করতে, সশস্ত্র বাহিনীর ভিতরে চালু মান্ধাতা আমলের ঔপনিবেশিক চালচলন, রীতিনীতি, আইন-কানুন পরিবর্তন করতে ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার এই বিদ্রোহ ঘটে। এই বিদ্রোহটা ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে দেশে প্রথম বিদ্রোহ, ক্ষমতালোভী অফিসারদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহে কর্নেল তাহের নেতৃত্ব দেন। এ বিদ্রোহ গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে সফল হয়। রক্তগঙ্গা বন্ধ করতে সফল হয়। সশস্ত্র বাহিনীর ভিতরে বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে সফল হয়। খুনি খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতা দখলের পুনঃপ্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয় এবং ঔপনিবেশিক রীতিনীতি বদলাতে সফল হয়। কিন্তু সৈনিকদের উত্থাপিত ১২ দফার সঙ্গে জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে সিপাহি-জনতার লক্ষ্য মার খায় এবং জিয়াউর রহমান ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নেয়। কর্নেল তাহের হচ্ছেন সিপাহি-জনতার নায়ক। আর জেনারেল জিয়াউর রহমান হচ্ছে খলনায়ক। তাই ১৯৭৫ সালের ২৩ ও ২৪ নভেম্বর জিয়াউর রহমান তার সৈন্যবাহিনী দিয়ে সিপাহি-জনতার নায়ক কর্নেল তাহের ও নেতৃত্বদানকারী অন্যান্য নেতা এবং জাসদ নেতা মেজর এম এ জলিল, আ স ম আবদুর রব, আমি (হাসানুল হক ইনু)-কে বন্দী করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখে। জেনারেল জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী পাকিস্তানি পন্থা ও জামায়াতি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য শেষ বাধা জাসদ ও কর্নেল তাহেরের সৈনিকদের ধ্বংস করার জন্য ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কর্নেল তাহেরকে হত্যা করে। মেজর এম এ জলিল, আ স ম আবদুর রব ও আমাকে (হাসানুল হক ইনু)সহ অন্য নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। ৭ নভেম্বর সিপাহি বিদ্রোহ দিবস- অফিসার হত্যা বা মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস নয়। শত শত অফিসার এদিন ক্যান্টনমেন্টে ছিল। অফিসার মেস বা কোয়ার্টারে সৈনিকদের কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ, হুদা ও হায়দার- এই তিনজন শেরেবাংলানগরে অবস্থানরত সৈনিকদের ঘাঁটিতে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর সকাল ৮টার দিকে কোনো সৈনিক নয়, কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের হাতে নিহত হন। সিপাহি বিদ্রোহের মাধ্যমে মুক্ত জেনারেল জিয়াউর রহমানকে খুশি করার জন্য অথবা তার যোগসাজশে কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, হুদা ও হায়দারকে নিজ হাতে হত্যা করে। কোনো বিদ্রোহি সিপাহির হাতে তারা নিহত হননি। একটা বিদ্রোহের ভিতর দিয়ে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় ঢুকে পড়ে। তার ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ে সিপাহি বিদ্রোহ নিয়ে যারা বিষোদগার করেন সিপাহি বিদ্রোহকে ধামাচাপা দিতে এটিকে মুক্তিযোদ্ধা-অফিসার হত্যা দিবস এবং বিপ্লব ও সংহতি দিবস বলে সিপাহিদের বীরত্বকে খাটো করার চেষ্টা করেন। এ মহলটা কোনো না কোনোভাবে ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে র সঙ্গে, সামরিক শাসনের পক্ষে এবং চক্রান্তের রাজনীতির পক্ষে। কর্নেল তাহের বা জাসদকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য সিপাহিদের এ বিদ্রোহ কর্নেল তাহের করেননি। বরং এ বিদ্রোহ সাংবিধানিক ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনীতিকদের অংশগ্রহণে সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের একটা মহৎ প্রচেষ্টা ছিল। কর্নেল তাহের ব্যর্থ হয়েছেন, জিয়া ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে- তার মানে সিপাহি-জনতার লক্ষ্য বা উদ্যোগ ভুল ছিল- এটা ঠিক নয়। আমরা সবাই মিলে ’৯০-এ স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। ’৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। আমরা বা শেখ হাসিনা ক্ষমতা নিতে পারলাম না, ব্যর্থ হলাম- তার মানে কি এই যে, ’৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ভুল ছিল? শেখ হাসিনা, জাসদ বা আমাদের কৌশলগত ভুল ও ব্যর্থতার কারণে খালেদা জিয়া ক্ষমতা নিয়েছেন। ঠিক তেমনি ৭ নভেম্বর আমরা পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখতে পারিনি। জেনারেল জিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। এটা আমাদেল ভুল ছিল।
শিরোনাম
- চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
- আবুধাবিতে সাড়ে ৮৩ কোটি টাকার লটারি জিতলেন প্রবাসী বাংলাদেশি
- দৈনিক কোটি টাকার চাঁদাবাজি
- আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি বেড়েছে ২১০০ কোটি টাকা
- এবার নির্বাচনে সেনাবাহিনীই ভরসা
- পিআর : দেশ কতটা প্রস্তুত
- বাবার হাত ছেড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়িচাপায় সন্তানের মৃত্যু
- বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এসিড নিক্ষেপ, দুই নারী ও শিশু দগ্ধ
- এনএসডিএ'র নির্বাহী চেয়ারম্যান হলেন রেহানা পারভীন
- নারী পাচারে টোপ ‘ভালো চাকরি’
- মুগদায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনি, হাসপাতালে তরুণের মৃত্যু
- মাতুয়াইলে ১০ তলার ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
- জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা মব নয় : মাহফুজ আলম
- জাপানে ভূমিকম্পের মধ্যে সমুদ্রে ‘অদ্ভুত গর্জন’ শোনার দাবি
- ফ্যাসিস্টদের পুশইন করুন, বিচার করতে প্রস্তুত আমরা : নাহিদ
- শাকিবের আগামী ঈদের সিনেমা চূড়ান্ত
- এবার ‘ট্রাম্প সুগন্ধি’ বাজারে, বিতর্ক
- মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৮ ডাকাত গ্রেফতার
- পারমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত ইরানের
- তিতাসে পাওনা টাকা নিয়ে রাজমিস্ত্রিকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ২
সেই ৭ নভেম্বর নিয়ে বিতর্ক
তাহেরের নেতৃত্বে জাসদের সমর্থনে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান
হাসানুল হক ইনু
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর