শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

যে কারণে ধুঁকছে রেল

ধারাবাহিক অবহেলা দুর্নীতি লুটপাট, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র

সাঈদুর রহমান রিমন

যে কারণে ধুঁকছে রেল

গণপরিবহন হিসেবে যুগোপযোগী করে তোলার নানা পরিকল্পনা নেওয়া হলেও এখনো ধুঁকেই চলেছে রেলওয়ে। বিশেষ করে জনবল সংকট এ সেক্টরকে দারুণভাবে ভোগাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, সংকটের মধ্যে আরও রয়েছে ধারাবাহিক অবহেলা, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, বেশুমার দুর্নীতি-লুটপাট। এ ছাড়া ইঞ্জিন সংকট, বগি সমস্যা, অর্থাভাবের মতো বিষয়গুলো সম্ভাবনাময়  রেলওয়ে খাতকে বারবার মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য করছে।

রেল সংশ্লিষ্ট পুরনো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, পরিকল্পিত উদ্যোগ না থাকায় অব্যাহত লোকসান আর হরিলুটের বোঝা বইতে বইতে গৌরবময় প্রাচীন প্রতিষ্ঠান রেল অনবরত হোঁচট খাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ ৬৮ ভাগ ইঞ্জিন ও ৪৬ ভাগ মেয়াদ ফুরানো বগি নিয়েই চলছে বিপজ্জনক ট্রেনযাত্রা। এ ছাড়া ৪৫ ভাগ পণ্যবাহী ওয়াগন এবং ৭১ ভাগ রিলিফ ট্রেনের মেয়াদও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। রেলপথগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। রেললাইনে পর্যাপ্ত পাথর থাকার কথা থাকলেও তা নেই। পাথরের পরিবর্তে ফেলে রাখা হয়েছে নানারকম আবর্জনা। রেললাইনের ক্লিপগুলোও খুলে নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও কাঠের স্লিপারগুলো উধাও হয়েছে। ভাঙাচুরা স্লিপারগুলোকে বাঁশ দিয়ে জোড়া দিয়ে রাখা আছে। এমনকি রেল ব্রিজের মধ্যেও রেললাইনের মূল লোহার পাত না থাকায় বাঁশ দিয়ে জোড়া লাগিয়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশজুড়েই রেললাইনের অভিন্ন চিত্র বিরাজমান। এসব কারণেই রেল এখনো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সম্প্রতি রেলওয়ের নিজস্ব এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনেও রেলওয়ের নানা অরাজকতার চিত্র ফুটে উঠেছে।

সর্বত্রই শুধু ঝুঁকি আর ঝুঁকি : সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, রেলওয়ের ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্য ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার রেললাইন এবং ৩ হাজার ৬৫০টি ছোট-বড় ব্রিজের মধ্যে ৬ শতাধিক ব্রিজ এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এ মৃত্যুফাঁদের রেললাইন ও ব্রিজের ওপর দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করছে হাজার হাজার যাত্রীবোঝাই ট্রেন। তাছাড়া অধিকাংশ স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থাও মধ্যযুগীয়। লাইনের অধিকাংশ সিপার ভাঙা-ফাটা কিংবা ক্ষয়ে যাওয়া। সিøপার ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বোল্ট বা ক্লাম্পও নেই। সিøপারের নিচে ৬ ইঞ্চি পুরু পাথরের স্তর থাকার কথা, কিন্তু বেশিরভাগ লাইনে ৬ ইঞ্চি তো দূরের কথা পাথরই নেই। রেল ইঞ্জিন ও কোচগুলোর মেয়াদও অনেক আগে ফুরিয়ে গেছে। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলার কথা থাকলেও মাত্র ২০-২৫ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে রেল।

লোকবলের অভাব : লোকবল সংকটে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে। স্টেশনমাস্টার, লোকোমাস্টার (রেলইঞ্জিন চালক), ওয়েম্যান, পয়েন্টসম্যান ও অন্যান্য অপারেশন সম্পর্কিত লোকবল স্বল্পতায় এরই মধ্যে ১৬০টি রেলস্টেশন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও ২৫টি রেলস্টেশন যে কোনো সময় বন্ধ করে দেওয়া হবে। জনবল সংকটে রেলওয়ের সব বিভাগই চরম বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। সূত্র জানায়, অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ৪০ হাজার ২৬৫ জন, কর্মরত আছেন ২৫ হাজার ১৮৯ জন। ঘাটতি রয়েছে ১৫ হাজার ৭৫ জনবল। ১৯৮৫ সাল থেকে রেলে নিয়োগ বন্ধ থাকায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক নিয়মে চলতি বছরের মধ্যে আরও ৩ হাজার লোক অবসরে যাওয়ার কথা। শিগগির জনবল নিয়োগ না হলে রেল সেক্টরে বিপর্যয় নেমে আসার ব্যাপারেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর