সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১০ হাজার কোটি টাকা

বাজেট ২০২০-২১

মানিক মুনতাসির

দেশের অবহেলিত স্বাস্থ্য খাত নিয়ে মহামারী কভিড-১৯ মোকাবিলা করতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে। এ খাতের কোথাও কোনো শৃঙ্খলা নেই। এমনকি করোনা মহামারীতেও থেমে নেই স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় অনিয়ম দুর্নীতি। সরকারি হাসপাতালে নেই কাক্সিক্ষত সেবা। হয় না কোনো গবেষণা। সবকিছুর মূল হিসেবে দায়ী করা হয় এ খাতে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দ, আর সুশাসন এবং জবাবদিহিতার অভাবকে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর ২০২০-২১ এর বাজেট প্রণয়ন। আগামী ১১ জুন বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এবার স্বাস্থ্য খাতে অন্তত চলতি বছরের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন বাজেটের খসড়া অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। যা চলতি বাজেটে রাখা হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। কভিড-১৯ এর মহামারীকে আমলে নিয়ে এবার এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, কভিড-১৯ এর মহামারীতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের দৈন্যতা ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবে। এরপরও আসছে বাজেটে এ খাত আশানুরূপ বরাদ্দ পাচ্ছে না। তবে আগের চেয়ে বরাদ্দ বাড়বে আগামী ২০২০-২১ বাজেটে। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আসছে বাজেটে স্বাস্থ্য খাত থাকবে পঞ্চম স্থানে। অন্যদিকে সামরিক খাতেও বরাদ্দ বাড়ছে চার হাজার কোটি টাকা। সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটের খসড়ায় স্বাস্থ্য খাতে ২৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট বাজেটের প্রায় ৫ শতাংশ এবং জিডিপির হিসাবে ০.৭৪ শতাংশ। তবে বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার আগে এ আকার আরও কিছুটা বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ যাই থাকুক তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। একইভাবে স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিদেশি সংস্থা বিশেষ করে বিভিন্ন হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সংস্থার যোগাযোগ বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বরাদ্দের দিক থেকে স্বাস্থ্য খাত ৫ নম্বরে। এ খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা-ই সঠিকভাবে খরচ করতে পারবে না। এ খাতে আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গবেষণা বাড়ানোও জরুরি। সূত্র জানায়, এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩৬ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। আর বরাদ্দের দিক থেকে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান হতে যাচ্ছে পঞ্চম। যা এবারই প্রথম। জানা গেছে, আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অর্থমন্ত্রী বাজেটের যে রূপরেখা দিয়েছেন, সেখানে তিনি বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার কথা বলেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ১০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলেছে। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়- ৩৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২৯ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীকালে একটি ভালো অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের দিকে এবং খাদ্য নিরাপত্তার দিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট ব্যয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর