মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

জার্মানি ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে ভারত

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী সপরিবারে আক্রান্ত

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনাভাইরাসে এবার সপরিবারে আক্রান্ত হয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল প্যাসিনিয়ান। এ ভাইরাসে আক্রান্তের দিক থেকে এখন জার্মানি ও ফ্রান্সকেও ছাড়িয়ে গেছে ভারত। দেশটিতে এখন আক্রান্তের মোট সংখ্যা এক লাখ সাড়ে ৯১ হাজার। পাশাপাশি জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ সাড়ে ৮৩ হাজার এবং ফ্রান্সে এ সংখ্যা এক লাখ ৮৯ হাজারের কাছাকাছি।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এখন পৌঁছেছে তিন লাখ ৭৫ হাজারে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে মৃত্যু ও আক্রান্ততে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত এক লাখ সাড়ে ছয় হাজার ও আক্রান্ত ১৮ লাখ ৩৮ হাজার। এর পরের অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৩৮ হাজার ও আক্রান্ত দুই লাখ ৭৫ হাজার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৪১৫ ও আক্রান্ত দুই লাখ ৩৩ হাজার। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার ও আক্রান্ত পাঁচ লাখ ১৫ হাজার। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার ও আক্রান্ত এক লাথ ৮৯ হাজার।

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী সপরিবারে আক্রান্ত : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল প্যাসিনিয়ান। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, তিনি এবং তার পুরো পরিবার নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফেসবুকে এক লাইভ ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী নিকোল বলেন, ‘আমার শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়নি। তবুও আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের করোনায় আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আর্মেনিয়ার মোট জনসংখ্যা ৩০ লাখ। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৪০২ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৩৯ জন। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১২০ জন এবং মারা গেছেন ৮ জন। 

মৃত্যুর সংখ্যায় বিশ্বে চতুর্থ ব্রাজিল : বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের মহামারীতে মৃত্যুর সংখ্যায় ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালির পরই এখন ব্রাজিলেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। শনাক্ত হওয়া ৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৪৯ জন কভিড-১৯ রোগী নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে থাকা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো ধারাবাহিকভাবে এ সংকটকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিলের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাজ্যগুলোতে জারি করা লকডাউনের সমালোচনা করে আসছেন তিনি। ব্রাজিলে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত। দুই সপ্তাহেই দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে, যেখানে যুক্তরাজ্যে লাগছে দুই মাস, ফ্রান্সে চার মাস ও ইতালিতে পাঁচ মাস। পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। পরিস্থিতি এমন হলেও প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। কারণ প্রাদুর্ভাবের চেয়েও লকডাউনের কারণে অর্থনীতি বেশি বিপর্যস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন তিনি। রবিবার রাজধানী ব্রাজিলিয়াতে মুখে মাস্ক ছাড়াই তাকে শত শত সমর্থকের সঙ্গে মিলিত হতে দেখা গেছে। ৭৭ দিন পর মৃত্যুশূন্য সুইডেন : করোনায় মৃত্যুবিহীন একটি দিন পার করল মহামারী মোকাবিলায় সফল দেশগুলোর শীর্ষে থাকা ইউরোপের দেশ সুইডেন। গত ১৩ মার্চের পর এই প্রথম দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনও মারা যাননি। রবিবার সুইডিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

লকডাউন ছাড়াই জনগণের স্বেচ্ছা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরার নিয়ম মেনে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সুইডেনের উন্মুক্ত এই পদ্ধতি নিয়ে অনেকের সমালোচনা ছিল। এমনকি অনেকে ভাইরাস মোকাবিলায় দেশটি বিপজ্জনক কৌশল বেছে নিয়েছে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে ভবিষ্যতে দেশটির এই সফল পদ্ধতি মহামারী মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুকরণীয় মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।

করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যখন লকডাউন আরোপ করে, তখন উল্টো পথে হেঁটে সফল হয়েছে সুইডেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ করোনায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়ে অবরুদ্ধ দশায় আটকা পড়লেও মহামারীর শুরু থেকেই সুইডেনের রাস্তায় হাজারও মানুষের চলাচল, দোকানপাট, রেস্তোরাঁ খোলা দেখা যায়। এতে জনগণের স্বেচ্ছা সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য সুরক্ষা অবলম্বন করতে দেখা যায়। যদিও এই উন্মুক্ত পদ্ধতির করোনা মোকাবিলা নিয়ে বিশ্বজুড়েই সমালোচনার মুখে পড়েছিল সুইডেন। তবে দেশটির সরকার শক্তিশালী চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণেই এই পদ্ধতিতে করোনা মোকাবিলার পথে হাঁটছে বলে জানায়।

সুইডিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, প্রতিরোধের চেয়ে শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থার মাধ্যমেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। যদিও ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সুইডেনে করোনায় গড় মৃত্যু বেশি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ৩৯৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৪২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪ হাজার ৯৭১ জন।

মুম্বাইয়ের হাসপাতালে লাশের স্তূপ, নিচ্ছেন না স্বজনরা : মুম্বাইয়ের হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে সারি সারি মরদেহ পড়ে আছে। শয্যা সংকটে রোগীদের মেঝেতে ঘুমানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না সে ব্যাপারে প্রমাণ দেখাতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন  রোগীরা। প্রত্যেক দিন নতুন নতুন ওয়ার্ড করা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যা হতে না হতেই সেসব ওয়ার্ড করোনা রোগীতে ভরে যাচ্ছে। সূত্র : ব্লুমবার্গ।

এ চিত্র মহামারীর প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠা মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের করোনা হাসপাতালগুলোর। গত সপ্তাহে সামাজিক  যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুম্বাইয়ের সরকারি লোকমান্য তিলক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসে মৃতদের দেহ পড়ে আছে। পাশের শয্যায় করোনা রোগীরা। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ডিনকে সরিয়ে দেয়। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের ওয়ার্ডে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের নার্স মাধুরী রামদাস গৈকার বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে মরদেহ স্তূপ হয়েছে। কারণ অনেক পরিবার সংক্রমণের ভয়ে মরদেহ নিতে অস্বীকার করেছে। ভাইরাসটির কারণে চারপাশে তীব্র ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে; যা ভারতে নতুন একটি অস্পৃশ্য শ্রেণি তৈরি করেছে। সংক্রমিত রোগী অথবা তাদের পরিবারকে প্রতিবেশী অথবা বাসার মালিকরা বের করে দিচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মরদেহের সব কাগজপত্র প্রস্তত করে রেখেছি। কিন্তু সেগুলো কেউই নিয়ে যাচ্ছে না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুম্বাইয়ের সরকারি একটি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের তুলনায় হাসপাতালের ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে দ্বিগুণ রোগী আসছে। একটি অক্সিজেন স্টেশন থেকে বহু রোগীকে সরবরাহ করা হচ্ছে। হাসপাতালের একটি শয্যা কয়েকজন রোগী ভাগাভাগি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।’

সেন্ট্রাল মুম্বাইয়ের সরকারি কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সাদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক দিন নতুন নতুন ওয়ার্ড চালু করছি। কিন্তু দিনের শেষে কভিড-১৯ রোগী দিয়ে সেগুলো পূর্ণ হচ্ছে। বর্তমানে এটা অত্যন্ত খারাপ অবস্থা। বর্তমানে সব ওয়ার্ডই কভিড-১৯ ওয়ার্ড এবং ধারণক্ষমতার পুরোটাই রোগী দিয়ে পরিপূর্ণ।’

প্রায় দুই মাসের কঠোর লকডাউন সত্ত্বেও ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত মুম্বাইয়ে করোনার ভয়াবহ প্রকোপ শুরু হয়েছে। দেশটির মোট করোনা রোগী এক-চতুর্থাংশই মুম্বাইয়ের; বর্তমানে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে পুরো ভারতে করোনা আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৯১।

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাথমিক কেন্দ্র নিউইয়র্ক এবং ইউরোপ হয়ে উঠলেও বর্তমানে তা ঘুরছে ব্রাজিল এবং ভারতের দিকে। দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো এবং নিম্নমানের জীবনযাত্রার কারণে করোনাভাইরাসের উর্বর জমি হয়ে উঠছে ভারত। গত বৃহস্পতিবার করোনায় মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর