রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

মামলার জালে ৩৮ পৌরসভা নির্বাচন

ভোটার তালিকা, সীমানা জটিলতাসহ নানা অজুহাতে ৮-১৫ বছর ধরে হচ্ছে না ভোট

গোলাম রাব্বানী

মামলার জালে ৩৮ পৌরসভা নির্বাচন

ঢাকার দোহার পৌরসভায় নির্বাচন হয় ২০০০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। এ পৌরসভায় প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০০০ সালের ১০ ডিসেম্বর। সে হিসেবে মেয়াদ শেষ হয় ২০০৫ সালের ৯ ডিসেম্বর। ২০১৩ ও ২০১৯ সালে পৌর নির্বাচনের সময় এ পৌরসভার তফসিলও দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্বাচন হয়নি। জানা গেছে, ভোটার তালিকা ও সীমানাসংক্রান্ত মামলা জটিলতায় এ পৌরসভায় নির্বাচন আটকে রয়েছে ১৫ বছর।

শুধু দোহার পৌরসভা নয়, দেশের আরও ৩৭ পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে না আট থেকে ১৫ বছর। সীমানা জটিলতাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে মামলা-মোকদ্দমা করে মেয়র ও কাউন্সিলররা ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। অনেক পৌরসভা গঠনের পর থেকে কোনো নির্বাচনই হয়নি। আবার কিছু পৌরসভায় মামলা শেষ হলেও অদৃশ্য কারণে নির্বাচন হচ্ছে না।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের লোকজন দিয়ে মামলা করিয়ে বছরের পর বছর নির্বাচন আটকে রেখে স্বপদে বহাল থাকছেন। ফলে নতুন প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছে না জনগণ। সেবাবঞ্চিত হচ্ছে তারা। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পৌরসভা আইন অনুযায়ী পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি)সূত্র জানিয়েছেন, বতর্মানে দেশে পৌরসভার সংখ্যা ৩২৯। এর মধ্যে নির্বাচন-উপযোগী পৌরসভার সংখ্যা ২৯১। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে নির্বাচন হবে ২৩৫ পৌরসভায় এবং এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হবে ৫৬ পৌরসভায়। সীমানা জটিলতা ও মামলার কারণে নির্বাচন আটকে আছে ৩৮ পৌরসভায়। এর মধ্যে সীমানাসংক্রান্ত মামলা জটিলতা রয়েছে ১৫ পৌরসভায় এবং বিভিন্ন কারণে মামলা রয়েছে ২৩ পৌরসভায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আদালতের স্টে অর্ডার থাকলে আমরা নির্বাচন করতে পারি না। আবার সীমানা বাড়াতে গেলেও নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যায়। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় আছে, আমাদের ১২ জন আইনজীবী রয়েছেন। আমরা চেষ্টা করি। আমরা আপিল করি, আপিলের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন করা সম্ভব হয় না।’ জনপ্রতিনিধিরা স্বপদে থাকতে মামলা দিয়ে নির্বাচন আটকে রাখছেনÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা হতে পারে। পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হয়। জনগণ নিজের পছন্দমতো প্রতিনিধি বাছাই করতে পারেন।’

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্বাচন কমিশনে ৩২৯ পৌরসভার বিভিন্ন তথ্য পাঠিয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার শ্রেণি, প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ, সীমানা পরিবর্তন ও ওয়ার্ড বিন্যাসসংক্রান্ত তথ্য, মামলাজনিত তথ্যও রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সে আলোকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ৩৮ পৌরসভায় মামলার কারণে নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কমিশন।

ইসিসূত্র জানিয়েছেন, দোহার পৌরসভায় ২০১৩ সালে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের ঠিক তিন দিন আগে সীমানা জটিলতা নিয়ে একটি রিট হয়। ফলে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। বাদীরা মামলা তুলে নিলে নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৪  অক্টোবর নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হয়। কিন্তু সে নির্বাচনও হয়নি। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভা নির্বাচনের পর ২০১২ সালের ১২ জুলাই প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ১১ জুলাই। কিন্তু মামলার কারণে নির্বাচন আটকে রয়েছে। জানা গেছে, সীমানা সম্প্রসারণসংক্রান্ত মামলা জটিলতায় এ নির্বাচন আটকে আছে। নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভা নির্বাচনের পর ২০০৬ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। মেয়াদ শেষ হয় ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল। একটি রিট (৩৮৪৩/২০১০) থাকায় এ পৌরসভায় নির্বাচন আটকে রয়েছে।

কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভা গঠিত হয় ২০০২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। এরপর এ পৌরসভায় নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন না হওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে একটি রিট পিটিশন (৩১৭১/২০০৯) আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের।

পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভায় নির্বাচনের পর প্রথম সভা হয় ২০১২ সালের ১৭ জুন। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ১৬ জুন। মামলার কারণেই এ পৌরসভায় নির্বাচন আটকে রয়েছে প্রায় তিন বছর। গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভায় নির্বাচনের পর ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রথম সভা হয়। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর। নির্বাচন আটকে রয়েছে প্রায় চার বছর। জানা গেছে, সীমানা সম্প্রসারণ ও ভোটার স্থানান্তরসংক্রান্ত রিট পিটিশনের (৬৩১৭/২০১৬, ৬৬১৪/২০১৬ ও ১০৩৯২/২০১৯) বিপরীতে রুল নিশি জারি আছে।

আইনি জটিলতা নেই তবু আটকে আছে ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচন। ২০১১ সালের ১৩ মার্চ এ পৌরসভায় নির্বাচন হয়। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ২ এপ্রিল। কিন্তু সাড়ে চার বছরেও এ পৌরসভায় নির্বাচন হয়নি। কেন নির্বাচন হচ্ছে না? নির্বাচন কমিশন কেন ভোটের উদ্যোগ নিচ্ছে না? তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে জরুরি ভিত্তিতে পুরনো সীমানায় ঝিনাইদহ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে চিঠি দিয়েছেন ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। সম্প্রতি তিনি সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে আইনগত কোনো জটিলতা বা হাই কোর্টের কোনো স্থগিতাদেশ নেই। তাই জরুরি ভিত্তিতে পুরনো সীমানায় ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি সিইসিকে অনুরোধ জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর