বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
আদালতের ব্যতিক্রমী রায়

কারাগারের পরিবর্তে স্ত্রী সন্তানদের কাছে ফিরে গেলেন ৫০ স্বামী

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা ৫০টি পৃথক মামলার আসামিকে সাজা না দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দাম্পত্য জীবন সুন্দরভাবে পরিচালনার শর্তে মুক্তির এক ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছে আদালত। গতকাল সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন।

আদালতের হস্তক্ষেপে অভিযুক্ত স্বামীরা নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরে আসছেন এমন খবর পেয়ে ফুল নিয়ে এজলাসের দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন মামলার বাদী স্ত্রীরা। এ সময় অনেক স্ত্রীকে নিজের শিশুসন্তান কোলে নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আদালত সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার হয়ে এই ৫০ নারী তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন। মামলার ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যুদ্ধংদেহী অবস্থান তৈরি হয়। এতে তাদের সন্তানরা বঞ্চিত হয় জীবন, নিরাপত্তা, খাদ্য, বাসস্থান, আদর-যত্ন, ভালোবাসা থেকে। শিশুদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ডুবে যায় অনিশ্চয়তার মধ্যে। স্ত্রী স্বামীর ঘরছাড়া হয়ে সন্তান-সন্ততি নিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের পথে যাত্রা করেন। এমন অনিশ্চয়তার জীবনের অবসান ঘটিয়ে সংসারে-সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে পরিবেশ সৃষ্টি করতে আসামিদের খালাস দেয় আদালত। আদালত জানায়, শাস্তি নয়, শান্তি, সম্প্রীতির সুবাতাস আর ফুলের গন্ধ বিলিয়ে মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৫০টি পরিবারকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে স্ত্রীকে স্বামীর কাছে, আর স্বামীকে স্ত্রীর কাছে এবং সন্তানদের তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল মা-বাবা উভয়ের সান্নিধ্য লাভের জন্য এ রায় দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আদালত কর্তৃক ৫০ মামলার আসামিদের খালাস প্রদানের রায়ের পর স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় আদালতের আঙিনায় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় অনেক স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের। ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো ৫০টি সংসার আদালতের রায়ে জোড়া লাগার এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন মামলার বাদী, বিবাদী, আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ। তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকার মোহাম্মদ মিয়া বলেন, ‘১৪ বছর আগে একই গ্রামের আমিনা খাতুনকে বিয়ে করি। আমাদের সংসারে চারটি সন্তান রয়েছে। দেড় বছর আগে পারিবারিক বিরোধের জেরে স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলায় তিন মাস হাজতবাস করতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘মামলার ফলে আমাদের সংসার ভাঙার উপক্রম দেখা দেয়। সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আদালতের এমন রায়ে আমার ভাঙা সংসার জোড়া লেগেছে। আমি আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবন সুখে-শান্তিতে কাটাতে চাই।’ সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আফতাব উদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জের আদালতের ইতিহাসে এটি একটি ব্যতিক্রমী রায়। আদালতের হস্তক্ষেপে ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো সংসারগুলোতে শান্তির সুবাতাস ফিরে আসবে। এতে পারিবারিক ও সামাজিক ভিত্তি মজবুত হবে। তিনি বলেন, এমন রায়ে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবে।

সর্বশেষ খবর