শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ওয়াশিংটনে নিরাপত্তায় ২০ হাজার সেনা

প্রতিদিন ডেস্ক

ওয়াশিংটনে নিরাপত্তায় ২০ হাজার সেনা

ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনে সতর্ক প্রহরায় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা -এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে ওয়াশিংটনজুড়ে মোতায়েন হয়েছে মার্কিন সেনা। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা ২০ জানুয়ারি প্রবল সহিংস বিক্ষোভ দেখাতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। সেই শঙ্কা থেকেই প্রায় ২০ হাজার সশস্ত্র মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে। কারণ গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে তান্ডবের পর এই শপথ অনুষ্ঠনে আর কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না মার্কিন প্রশাসন। এ উপলক্ষে মোতায়েন হতে যাওয়া ফোর্স আফগানিস্তান ও ইরাকে এখন যত সেনা মোতায়েন রয়েছে তার কয়েক গুণ।

আফগানিস্তান ও ইরাকে এখন সব মিলিয়ে ৫ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। ওয়াশিংটন মোতায়েন রয়েছে ৬ হাজার ২০০ জন সেনা সদস্য। সব সেনা সদস্যের হাতে দেওয়া হয়েছে মারাত্মক অস্ত্র। ২০ তারিখের আগে সেখানে মোট ২০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় গার্ড ব্যুরোর প্রধান জেনারেল ড্যানিয়েল হোকানসন। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল হিলে এত সেনা সমাবেশ এর আগে কখনো দেখা যায়নি। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রায় ১৬টি গোষ্ঠী প্রতিবাদ সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে পুলিশকে।

এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার ওয়েরে এবং ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কেনেথ কিউসিনেলি সম্ভাব্য উগ্রবাদী সহিংসতার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, আগামী কয়েক দিনের ভিতরেই তারা জাতীয় হুমকির বিষয়ে একটি বুলেটিন প্রচার করবেন যাতে আমেরিকার সমস্ত নাগরিককে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হবে।

গত কয়েক দশক তো বটেই, দূর অতীতেও এমন ভূমিকায় দেখা যায়নি মার্কিন বাহিনীকে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী রাজনীতি এড়িয়ে চললেও গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনে হামলার সঙ্গে বেশ কজন সাবেক এবং কর্মরত সেনা সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ উঠতে থাকায় সেনা নেতৃত্ব স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে পেন্টাগনের ওপর চাপও তৈরি হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনীসহ মার্কিন সেনাবাহিনীর সব শাখার শীর্ষ কমান্ডাররা যৌথভাবে সব সেনা সদস্যদের প্রতি এক বার্তা পাঠিয়েছেন। যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলিসহ সাতজন শীর্ষ জেনারেল এবং একজন অ্যাডমিরালের সই করা এই বার্তা সেনার উদ্দেশ্যে দেওয়া হলেও মার্কিন সংবাদ মাধ্যম তা প্রকাশ করেছে। বার্তায় বলা হয়, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে ৬ জানুয়ারির সহিংস দাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, ক্যাপিটল ভবন এবং আমাদের সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার ওপর সরাসরি হামলা। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং জমায়েতের অধিকার কাউকে সহিংসতা, দেশদ্রোহিতা এবং বিদ্রোহের অধিকার দেয় না। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির কোনো চেষ্টা আমাদের (সেনাবাহিনীর) মূল্যবোধ, রীতি এবং শপথের খেলাপ এবং বেআইনি। কমান্ডাররা সৈনিকদের বলেছেন, ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন এবং তিনি সেনাবাহিনীর নতুন কমান্ডার-ইন-চিফ হবেন। এই বিবৃতির পরই ফের আন্তর্জাতিক মহল সরগরম। জানা গেছে, ক্ষমতায় বসতে চলা ডেমোক্র্যাটরা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতা শেষের আগেই অভিশংসন করতে মরিয়া। এরই মধ্যে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়েছে। এখন তা চূড়ান্ত রূপ পেতে সিনেটে ভোটাভুটিতে যাবে।

গত সপ্তাহে ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন তান্ডবের পর ২৪ ঘণ্টা জুড়েই মোতায়েন থাকছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। দায়িত্ব পালনের পর অনেক সদস্যই বিশ্রাম নিতে সেখানেই খানিক ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। স্তূপাকারে জমা রাখা হয়েছে দাঙ্গা ঠেকানোর সরঞ্জাম আর গ্যাস মাস্ক। আবার ভবনের বাইরে সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিচ্ছেন অনেক সদস্য। ক্যাপিটল ভবন ঘিরে নতুন বেষ্টনী নির্মাণ এবং অন্য নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভবনটি ঘিরে ৭ ফুট উঁচু বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। ধাতব বাধা নির্মাণের পাশাপাশি ক্যাপিটল ভবন সংশ্লিষ্ট এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। ক্যাপিটলের আশপাশের সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস জানিয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে ওয়াশিংটন মনুমেন্ট। মেয়র মুরিয়েল বাউসার দর্শনার্থীদের না আসার আহ্বান জানিয়েছেন। শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলতে থাকার মধ্যে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ?আরও বিক্ষোভের প্রস্তুতির খবরের আলোকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি অবশ্যই সহিংসতা, আইন ভঙ্গ এবং যে কোনো ধরনের তান্ডব বন্ধ রাখতে হবে। এগুলোর জন্য আমরা দাঁড়াচ্ছি না আর এর জন্য আমেরিকাও দাঁড়াবেও না।’

ওয়াশিংটন সাবওয়ে সিস্টেম জানিয়েছে, গত শুক্রবার থেকে আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩টি স্টেশন বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া তিনটি ব্যস্ততম ডাউনটাউন স্টেশনও বন্ধ রাখা হবে। ক্যাপিটলে হামলার পর কিছু ট্রাম্প সমর্থক ফ্লাইটে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। আর সে কারণে নতুন করে এই ঘটনা এড়াতে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান স্টিভ ডিকসন গত বুধবার একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ফ্লাইট বিঘ্নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে। শপথ অনুষ্ঠানের সপ্তাহে বৃহত্তর ওয়াশিংটনে সব রিজার্ভেশন বাতিল করেছে এয়ারবিএনবি এবং হোটেল টুনাইট।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর