মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

উৎসবের ভোটে শঙ্কা

প্রচারণা শেষ, কাল ভোট, মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, চট্টগ্রামে গভীর রাতে কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসার সামনে গুলি, প্রস্তুত ১১ হাজার ৫৭২ ইভিএম

গোলাম রাব্বানী, ঢাকা ও সাইদুল ইসলাম, মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উৎসবের পাশাপাশি শঙ্কাও দেখছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। প্রথম দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনকে ঘিরে উৎসব বিরাজ করছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। নির্বাচনের জয় পরাজয় নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। বিশেষ করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা কাদের ভোট দেবেন, সেই হিসাব করছে দলের নেতারা। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কার কথা চিঠি দিয়ে ইসিকে জানিয়েছেন অনেক প্রার্থীও। গতকাল মধ্যরাতে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে। মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এ সিটিতে ভোট গ্রহণ। রবিবার গভীররাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসার সামনে গুলি ছোড়া হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ইসির কর্মকর্তারা নানা শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনারকে। তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার শঙ্কা ও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে দুটি প্রাণহানি ঘটেছে। সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই যায়। এ নির্বাচনে ইসির নিয়ন্ত্রণে থাকা অপরিহার্য, নইলে তা ভ-ুল হয়ে যাবে। সুষ্ঠু নির্বাচন দল ও মত নির্বিশেষে  সবার জন্য দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষা। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও বৈঠকে নানা শঙ্কার কথা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে জানিয়েছেন। ইসির কর্মকর্তাদের মতে, ৩৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২টিতেই আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। তারা বলছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সংঘাত হতে পারে। ভোটের দিন নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা হবে বড় চ্যালঞ্জ। এ ছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে যে কোনো সময় সংঘাত-সহিংসতা হতে পারে।

প্রস্তুত ১১ হাজার ৫৭২ ইভিএম : চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে সব ধরনের প্রস্তুত রয়েছে চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশনের সকল দায়িত্বশীলরা। ভোটের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৭২টি ইলেকট্রনিক ভোটার মেশিন (ইভিএম)। এ সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৩৫ এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৮৬টি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও আরও পাঁচজন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বুধবার সিটি নির্বাচনে ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের জন্য ১১ হাজার ৫৭২টি ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উত্তেজনা-উৎসব : চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের (চসিক) ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশির ভাগ উত্তেজনা-উৎসব ও কঠোর নজরদারিতে থাকবে প্রায় ২৫টি ওয়ার্ড এলাকায়। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় এসব ওয়ার্ডগুলো ঘটেছে প্রচারণার সময় খুন, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে পোস্টার ব্যানার ছেঁড়া, হামলা, মামলাসহ একাধিক ঘটনা। এসব ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলর প্রার্থীদের নানাবিধ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে পড়েছে প্রায় ৩৫টার বেশি অভিযোগও। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বা ইতিমধ্যে যে সব এলাকায় নানা ঘটনায় খুন ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটেছিল প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা কঠোর নজরদারিতে রাখবেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে সাতজন মেয়র প্রার্থীসহ মোট ২৩৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। মেয়র পদে সাতজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে (পুরুষ) ১৭২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। যেসব এলাকায় বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন এবং নানাবিধ ঘটনা ঘটেছে সেগুলোতে আতঙ্কিত আছেন ভোটাররা। ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডের মধ্যে চান্দগাঁও ৪ নম্বর ওয়ার্ড, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী, দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড, লালখান বাজার ওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটিতে দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগের ১২ জন বর্তমান কাউন্সিলরসহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক বিদ্রোহী হিসেবে কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।

মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে ২৫ প্লাটুন বিজিবি। গতকাল বিকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহল শুরু করেছে বিজিবি। বিজিবি সদস্যরা ২৫ জানুয়ারি বিকাল থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে। এ ছাড়া নদী এলাকার নিরাপত্তার জন্য পুলিশের নৌ-টহল এবং পোশাকি পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য সাদা পোশাকেও পুলিশ মোতায়েন থাকবে। নগরীতে টহল পুলিশের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে পুলিশ চেকপোস্টসহ বিভিন্ন স্থানে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কাউন্টার টেররিজম, সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত থাকবে।

কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসায় দুর্বৃত্তদের গুলি : চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিনের বাসায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শটগানের ছয়টি ও পিস্তলের তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছেন, কেউ বলতে না পারলেও নির্বাচনী মাঠে সহিংসতা ঘটাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল রাত ৭টা পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি। তবে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তদন্ত করছেন বলে জানান পুলিশ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর