মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা সীমানা ছাড়িয়ে

প্রতিদিন ডেস্ক

বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা সীমানা ছাড়িয়ে

বান কি-মুন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী মানুষের লড়াইয়ের প্রেরণা হিসেবে কাজ করে বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন। গতকাল এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সূচনালগ্নে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে এ কথা বলেন তিনি। সূত্র : বিডিনিউজ। বান কি-মুন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রভাব ও উত্তরাধিকার বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে, উদ্বুদ্ধ করেছে বিশ্বব্যাপী অন্য উপনিবেশবাদবিরোধী ও স্বাধীনতা সংগ্রামকেও। বঙ্গবন্ধুর সমন্বিত কূটনীতি স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের শিল্পায়নসহ সার্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে অতিদারিদ্র্য থেকে তুলে এনেছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজের চতুর্থ পর্ব ‘বঙ্গবন্ধু : বাংলাদেশের চেতনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বান কি-মুন। উল্লেখ্য, একাত্তরে বাংলাদেশ যখন মুক্তিযুদ্ধ করছে তখন দিল্লিতে দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসে অধস্তন কূটনীতিক ছিলেন জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিব বান কি-মুন। ১৯৭৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তির প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন তিনি।

বান কি-মুনের কলম দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ওই চুক্তিতে সই করেছিলেন জানিয়ে বান কি-মুন বলেন, ‘এখনো সেই কলম আমি নিজস্ব স্যুভেনির হিসেবে সংরক্ষণে রেখেছি। এটা আমার ব্যক্তিগত স্মৃতি।’ সে সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ওই কর্মকর্তার ফোন নম্বর চাইলে এক পাতা কাগজের কোণে নম্বরটি লিখে তা ছিঁড়ে আমার হাতে দেন।’ ‘মিতব্যয়িতার’ ওই ঘটনা তাঁকে অভিভূত করে উল্লেখ করে মুন বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা কীভাবে তাদের কাজ, জীবন ও সম্পদ রক্ষায় মিতব্যয়ী ছিলেন তা আজও সুস্পষ্ট মনে পড়ে। একখন্ড কাগজও তারা বাঁচাতে চাইতেন।’ ‘সম্পদ বাঁচানোর’ এ মানসিকতাও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি মনে করেন। বান কি-মুন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শুধু যে বাংলাদেশের জনক হিসেবে নয়, বিশ্বনেতা হিসেবেও আজীবন স্মরণ করা হবে অধস্তন একজন কূটনীতিক হিসেবে সে সময়ই তা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এমন একজন দূরদর্শী ব্যক্তি ও বিরল নেতা, সদ্যজন্ম নেওয়া বাংলাদেশের উন্নতিই ছিল যাঁর অভীষ্ট। মানবাধিকার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে তিনি সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য দেশের মানুষকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ‘চ্যাম্পিয়ন’ ছিলেন তিনি। মানবাধিকারের জন্য তাঁর অঙ্গীকার বিশ্বের অন্য প্রান্তের নিপীড়িত মানুষের জন্যও ছড়িয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে ভর করে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদেনে বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন বান কি-মুন। সেখান থেকে দারিদ্র্য বিমোচন, নারী শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্য কয়েকটি খাতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। অর্থনীতির উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু অভিযোজনে তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিশ্বনেতৃত্বের আসনে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা বহুমুখী সমস্যা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। কভিড-১৯ ও অন্যান্য বৈশ্বিক সমস্যা সব দেশের মানুষ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হওয়ার দিক উন্মোচন করেছে। এটা স্পষ্ট করেছে, দারিদ্র্য ও বৈষম্য রোধে এবং জলবায়ু মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, জরুরি এই সময়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাদের স্বপ্ন ও উত্তরাধিকারকে কাজে লাগানো। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। আমানুল হকের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ঢাকায় কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কেয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ খবর