মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ছুটি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ গুলি, আহত ৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক ও টঙ্গী প্রতিনিধি

ছুটি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ গুলি, আহত ৫০

ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে গতকাল ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুর ও রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। তবে টঙ্গীর মিলগেটে বিনা উসকানিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে রাজধানীর কালশী এবং কমলাপুরেও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। 

টঙ্গীতে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশত আহত হয়েছেন। আহতদের সবাই হামীম গ্রুপের সিসিএল পোশাক কারখানার শ্রমিক বলে জানা গেছে। তারা ঈদে ছুটি বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধ করে রাস্তায় নেমেছিলেন।            

সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন এএসআই রুবেল, এসআই কামাল, পুলিশ সদস্য সোহেল, শিল্প পুলিশের এএসআই জামাল, এএসপি জালাল আহম্মেদ, কারখানার শ্রমিক, মামুন, রনি, রুবেল, রাজিবুল, হাসান, লতিফা, ইমরান, ইয়াসমিন, রিনা, হাসিনা, আমলা, সাব্বির, রুবেল, এহসানুল হক, হাসান, সাবিনা, কলি, নিজাম উদ্দিন। তাদের উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসাপাতালে ভর্তি ও ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো শ্রমিকরা গতকাল সকাল ৯টার দিকে তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেন। পরে মালিক পক্ষ থেকে শ্রমিকদের তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে গার্মেন্ট থেকে বের হয়ে ১০ দিনের ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়েছে।

দুপুর ২টায় শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। সেখানেও শ্রমিকদের সরাতে পুলিশ একাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। থেমে থেমে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ চলে। 

আন্দোলনরত শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, ঈদে বাড়তি ছুটির দাবি নিয়ে কাজ বন্ধ রেখে টঙ্গী মিলগেটে জড়ো হন তারা। এ সময় আচমকা পুলিশ এসে শ্রমিকদের পেটাতে শুরু করে। বিনা কারণে তাদের ওপর হামলা চালানো হলো কেন- জানতে চাইলে, পুলিশ আরও মারমুখী হয়ে ওঠে, লাঠিচার্জ করে ও গুলি ছোড়ে। পুলিশের সঙ্গে আহত শ্রমিকদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢামেক সূত্র জানিয়েছে, টঙ্গীর ঘটনায় ১২ জন শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা হলেন হাসান, মামুন, রনি ইসলাম, মিজানুর রহমান, রুবেল, সোহেল, জাহিদুর, ইমরান, রুবেল, সাবিনা, কাঞ্চন ও সাব্বির। তাদের বেশির ভাগরই পায়ে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

দুপুরে ঢামেকে আহত শ্রমিক রুবেল বলেন, ‘ছুটি চাইছিলাম। গুলি খাইছি। এখন গাঁটের টাকা দিয়া হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরি।’ নোয়া গাড়িতে করে আহত শ্রমিকদের ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের কাউকে কাউকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) যেতে বলা হয়।

এ ব্যাপারে পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি দক্ষিণ) ইলতুৎ মিশ বলেন, শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালালে পুলিশও ধাওয়া দিয়ে পাল্টা ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

এদিকে ঈদে বাড়তি ছুটির দাবিতে কালশীতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ ২২ তলা গার্মেন্টের শ্রমিকরা। পরে পল্লবী থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয় মালিক পক্ষ। গতকাল বিকাল ৩টায় কালশীতে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টের সামনে মালিকপক্ষ ছুটির দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

দুপুর আড়াইটায় বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে কমলাপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে মিন্নি গার্মেন্টের শ্রমিকরা। সমস্যা সমাধানের জন্য মালিকপক্ষের সঙ্গে পুলিশ আলোচনা করছে বলে জানিয়েছেন মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত খান। 

এছাড়া গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকায় সকালে ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে একটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন।

শিল্প পুলিশ ও কারখানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকার স্টার লিংক ডিজাইন লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়ে জানতে পারেন, তাদের ঈদের ছুটি মাত্র তিন দিন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়কের পাশে নিয়ে যায়। সেখানেও পুলিশের সামনেই শ্রমিকরা ছুটি বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

সর্বশেষ খবর