শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকা শহরকে বিস্তৃত করতে হবে

------- মুস্তাফা খালিদ পলাশ

ঢাকা শহরকে বিস্তৃত করতে হবে

খ্যাতিমান স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ বলেছেন, ঢাকা শহরকে আরেকটু বসবাসযোগ্য করতে এটাকে বিস্তৃত করে জনঘনত্ব কমাতে হবে। ঢাকায় প্রতি বছর ৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। ১০ বছরে ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। মানুষকে তো বিদায় করা যাবে না, শহর বড় করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মোবাইল সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলেন তিনি।

মুস্তাফা খালিদ পলাশ বলেন, আমাদের সেবাসংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে বছরব্যাপী খোঁড়াখুঁড়ি, নাগরিক ভোগান্তির একটা ধারণা অনেক দিন ধরেই আছে। একটি শহরের একটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা উচিত, যেখানে সমন্বয় থাকবে। ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, গ্যাস- সবই আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান। একজন আজ রাস্তা ঠিক করছে, পরদিন আরেকজন এসে খুঁড়ছে। এটা ঠিক করতে সমন্বিত একটা বোর্ড থাকা উচিত, যেখানে সবাই মিলে বার্ষিক পরিকল্পনাগুলো একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করে কর্মকৌশল ঠিক করবে। নাগরিক ভোগান্তি কমাতে আজকাল যেসব সমাধান দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো আমার কাছে মলম সমাধান মনে হয়। ফ্লাইওভার বানাচ্ছি, এক্সপ্রেসওয়ে বানাচ্ছি। সবই ঢাকার মধ্যে করছি। এই একটা এক্সপ্রেসওয়ে যদি ঢাকা থেকে বিস্তৃত হয়ে নরসিংদী যেত, আরেকটি মানিকগঞ্জ যেত, মানুষ আধা ঘণ্টায় নরসিংদী গিয়ে সেখানে থাকতে পারত, তখন মানুষ সেখানেই থাকত। জীবনযাত্রার ব্যয়ও কমত। ঢাকাকে যদি পূর্ব-পশ্চিম দিকে একটু বিস্তৃত করা হয়, বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় তাহলে সংকট অনেক কমে যাবে। অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় আছে ঢাকায়, যেটা ঢাকায় থাকার কোনো দরকার নেই। সেগুলো সরিয়ে দিতে হবে। তাহলে ঢাকার ওপর থেকে চাপ কমবে। আর চাপ কমলেই আমরা বুঝতে পারি। ঈদের সময় ঢাকা অন্য নগরীতে পরিণত হয়। অর্থাৎ, জনসংখ্যা কমলে সব সমস্যা কমে যাবে। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি পলাশ আরও বলেন, ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা নিয়ে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট যে র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে তার কোনো ভিত্তি নেই। ঢাকা এমন একটি শহর না যে বসবাসযোগ্যতার দিক দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো শহরের নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। ঢাকা অত্যন্ত সহনশীল ও টেকসই একটি শহর না হলে দুই কোটি মানুষ এটুকু শহরে বাস করতে পারত না। এই ধরনের পরিসংখ্যানগুলো আসলে ভূ-রাজনৈতিক। কোনো দেশ বা গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারের জন্যই এমনভাবে করা হয়। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি স্থপতি পলাশ বলেন, এই ধরনের যে পরিসংখ্যানগুলো তৈরি করা হয়, তার শক্ত কোনো ভীত নেই। শুধুমাত্র দিল্লির সঙ্গে তুলনা করলেই দেখা যায়, সেখানে দূষণের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিতে হয়। সেই তুলনায় ঢাকার বায়ুদূষণ অতটা তীব্র নয়। একেবারে বসবাসের অযোগ্য শহর হলে সেখানে দুই কোটি মানুষ বাস করে কীভাবে? শিক্ষার হার বা যে সব সূচকের ভিত্তিতে তারা এ র‌্যাঙ্কিং ঠিক করেছে, সেগুলো কি সঠিকভাবে যাচাই করা হয়েছে? আমরা যেভাবে উন্নতি করছি, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, আমাদের যে উন্নয়নের ধারা, সেটাকে বিশ্ব দরবারে নিচু করে দেখালে অন্য কারও সুবিধা হতে পারে। কোনোভাবেই আমি ঢাকা শহরকে সেই রকম বসবাসের অযোগ্য মনে করি না। তিনি বলেন, যে শহরে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক প্রতিনিয়ত আসার পরও স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা চলছে, সেখানে কোনো যুক্তিতেই হঠাৎ করে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের সঙ্গে এর তুলনা করার সুযোগ নেই। বায়ুদূষণ, ভৌত অবকাঠামোসহ যেসব সূচকের কথা বলা হয়েছে, এগুলো একটা শহরকে বিচার করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে না। এটা অবশ্যই স্বার্থন্বেষী মহলের কাজ। তবে হ্যাঁ, ঢাকা শহরের অনেক সমস্যা আছে। সেটা আস্তে আস্তে আমরা সমাধানের দিকে যাচ্ছি এবং সমাধান করতে পারব বলে মনে করি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর