শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউনে জিরো টলারেন্স

বিনা কারণে বের হওয়ায় ঢাকায় আটক ৫ শতাধিক, মামলা পৌনে ৩শ গাড়ি, শহর ছিল ফাঁকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

লকডাউনে জিরো টলারেন্স

লকডাউন বাস্তবায়নে গতকাল রাজধানীর এফডিসি মোড়ে সেনাবাহিনী সদস্যদের টহল -রোহেত রাজীব

কঠোর বিধিনিষেধের লকডাউনের প্রথম দিনে জিরো টলারেন্সে ছিল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। অকারণে বাসাবাড়ি থেকে বের হওয়ায় শুধু রাজধানী ঢাকাতেই আটক হয়েছেন ৫ শতাধিক। জরিমানা করা হয়েছে পৌনে ৩০০ গাড়ির। ঢাকার বাইরেও একইভাবে কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবি। মোড়ে মোড়ে ছিল চেকপোস্ট। ছিল মোবাইল কোর্ট। রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রাইভেট কার চলতে দেখা গেছে। শহরগুলোতে ছিল রিকশার আধিক্য।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যানুসারে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১৫৩ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০ জনকে আটক, ২১২ জনকে মোবাইল কোর্টে জরিমানা, ৩৯১ জনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৭৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ৬টি গাড়ি।

গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর  কঠোর অবস্থানের চিত্র দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে; চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কাউকে থাকতে দিচ্ছে না তারা। সড়কে থামিয়ে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন- এমন সব প্রশ্নের পর যৌক্তিক জবাব দিতে পারলেই সাধারণ মানুষকে গন্তব্যে যেতে দেওয়া হচ্ছে। না হয় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সবাইকে। রাস্তায় গণপরিবহন চলছে না। চলছে ব্যক্তিগত, অফিসের গাড়ি। অনেকেই গন্তব্যে যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে। রাজধানীর পল্লবী, মিরপুর ১২ নম্বর এলাকা, কালশী, মাটিকাটা এবং বিমানবন্দর সড়ক এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। মিরপুর ১২ নম্বর বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এসব এলাকার প্রধান সড়কে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষকে বের হতে দেখা যায়নি। আর যারা বের হয়েছিলেন তারা পায়ে হেঁটে এবং রিকশা করে গন্তব্যে যান। কুড়িল-বিশ্বরোড  সড়ক এলাকায় সীমা রানী নামে এক স্বাস্থ্যকর্মী দুপুরে বাড়িতে যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কোনো যানবাহন না পেয়ে একটি পণ্যবাহী পিকআপকে তাকে বাড্ডায় নামিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মোড়ে মোড়ে রিকশার আধিপত্য থাকলেও বিধিনিষেধ থাকায় বাস, সিএনজি এবং লেগুনার মতো গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। কিন্তু সড়কে পণ্যবাহী পিকআপ ও মোটরসাইকেলের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সড়কে উল্লেখসংখ্যক প্রাইভেট কার থাকলেও এর যাত্রীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পরিচয়পত্র এবং যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে নিজেদের গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। তবে প্রধান সড়কে যান চলাচল কম থাকলেও আবাসিক এলাকার অলিগলির ভিতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি না থাকায় অনেককেই মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। রাজধানীর খিলক্ষেত ও ভাটারা এলাকার অলিগলিতে খোলা ছিল অধিকাংশ দোকানপাট। মুদিদোকান, ফলের দোকান, কাঁচাবাজার, রেস্তোরাঁর পাশাপাশি খোলা ছিল চায়ের স্টল, হার্ডওয়্যারের দোকান, সেলুন, স্টেশনারি ও কসমেটিক্সের দোকান। দেখা যায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও। দুপুরে কিছু রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খেতে দেখা গেছে অনেককে। এক পাশের ঝাঁপ বন্ধ রেখে বেচাকেনা চলেছে চা-সিগারেট। কিছু দোকানদার সকালে দোকান না খুলে পরিস্থিতি দেখে দুপুরের পর দোকান খুলে বসেন। সকালে বাজারে জনসমাগম অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম থাকলেও দুপুরের পর বাড়তে থাকে। তবে কুড়িল থেকে বাড্ডা পর্যন্ত মূল সড়ক ছিল ফাঁকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলও দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড মোড়ে উভয় দিকে পুলিশের ছিল কড়া পাহারা। মোড়ের সব দিকের সড়কে দেখা গেছে পুলিশ চেকপোস্ট। সাইনবোর্ড থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত সড়কে চারটি চেকপোস্ট দেখা গেছে। যদিও এই সড়কে কোনো ধরনের বাস বা গণপরিবহন দেখা যায়নি। রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে সেটাও খুব কম। দুপুর ২টার দিকে পুরো সড়কই ছিল ফাঁকা। কিছু ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে। শনির আখড়া থেকে গুলিস্তান আসার ফ্লাইওভারের মুখে ছিল আরেকটি পুলিশ চেকপোস্ট। গুলিস্তান পর্যন্ত ফ্লাইওভার ছিল পুরোপুরি ফাঁকা। বঙ্গবাজার থেকে সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেট পর্যন্ত যেতেও পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে। সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেট থেকে কাকরাইল মসজিদ, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, অফিসার্স ক্লাবের সামনে হয়ে মগবাজার পর্যন্ত সড়কেও অন্তত তিন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা যায়। এই সড়কের দুই পাশে ফার্মেসি ও খাবারের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকানই বন্ধ দেখা গেছে। যানবাহনও ছিল খুব কম। মগবাজার থেকে হাতিরঝিল, পুলিশ প্লাজা, লিংক রোড হয়ে নতুন বাজার পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানেও চেকপোস্টে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

মহাসড়কগুলোতে কড়াকড়ি : কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গণপরিবহন ছিল না। অল্প কয়েকজন যাত্রীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সাধারণ রিকশায় করে চলতে দেখা গেছে। ছিল সেনাবাহিনীর টহল ও পুলিশ চেকপোস্ট। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে মহাসড়কেও পুলিশ টহল দিচ্ছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সকাল থেকে কঠোর অবস্থান নিয়েছে গাজীপুর জেলা ও মহাসড়ক পুলিশ। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সকাল থেকে দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। একটি চন্দ্রা ত্রিমোড়ে, অন্যটি খাড়াজোড়া এলাকায়। টঙ্গী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) ইলতুৎ মিশ বলেন, লকডাউনকে কেন্দ্র করে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল টিম মাঠে কাজ করছে। দোকানপাট বন্ধ করা, মানুষকে ঘর থেকে বের হতে না দেওয়া এবং গাড়িতে চলাচলকারীদের জন্য বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সব বিষয়ে নজরদারি রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, গার্মেন্টকর্মী বহনকারী কিছু পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি।

ঘাটে ফেরি আছে যাত্রী নেই : মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট গতকাল সকাল থেকে ছিল একেবারেই ফাঁকা। চার দিকে সুনসান নীরবতা। ঘাটে মালবাহী কয়েকটি ট্রাক থাকলেও যাত্রী নেই। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ছোট-বড় ১৫টি ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক আছে। তবে ফেরিতে শুধু পণ্যবাহী ট্রাক, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, রোগী ও লাশ বহনকারী গাড়ি পার করা হচ্ছে। প্রথম দিন গতকাল পণ্যবাহী গাড়ি ও জরুরি দু-একটি প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ছাড়া রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে অন্য কোনো পরিবহন ছিল না। তবে দু-একজন যাত্রীকে জরুরি প্রয়োজনে ফেরিতে করে ঘাট পার হতে দেখা গেছে।  মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে চাপ নেই, সড়ক-মহাসড়ক ফাঁকা। কঠোর লকডাউন ঘোষণায় পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন ও সাধারণ যাত্রী একেবারেই নেই। জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করতে এই নৌরুটে প্রয়োজনীয় ফেরি রয়েছে। 

স্থলবন্দরগুলো ছিল স্বাভাবিক : স্বাভাবিক ছিল হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। অন্যান্য দিনের মতোই চলছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও ছাড়করণ কাজ। ফলে বন্দরে পিঁয়াজ, চাল, গম, ভুট্টা, পাথরসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি অব্যাহত রয়েছে।

বিভাগীয় শহরগুলোতেও কঠোর লকডাউন : ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামেও প্রথম দিনে ছিল কঠোর লকডাউন। সকালে নগরের ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে লকডাউন দেখতে আসা এমন ২১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় ৫টি গাড়ি জব্দ এবং ১০টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, সরকারি নির্দেশনা মতে, লকডাউন বাস্তবায়নে মহানগরীর ৪টি প্রবেশ ও বাহির পথসহ মোট ২০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে অভিযান চলমান থাকবে। এর বাইরে টহল এবং নগরের দুই প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে চেকপোস্ট এবং টহল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। নগরের প্রবেশপথ কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু ও সিটি গেট মোড়ে অবস্থান করা চেকপোস্ট ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বমোট ২৮টি টহল কাজ করছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে সাতটি টহল টিম এবং দুটি চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সিলেটে কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে যান ও জনশূন্য ছিল রাস্তাঘাট। সিলেট জেলায় জেলা প্রশাসনের ৩৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায় নগরে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন অমান্য করায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও যানবাহনের মালিককে জরিমানা করেন। এ ছাড়া মোড়ে মোড়ে ছিল চেকপোস্ট। রাজশাহীতে গতকাল ছিল ভারি বর্ষণ। ভোর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। ফলে রাজশাহীর রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। তবে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর আছেন। বৃষ্টির কারণে লোকজন বাইরে বের না হওয়ায় তাদের বেগ পেতে হয়নি। রোগী নিয়ে দু-একটি রিকশা হাসপাতালের দিকে গেলেও অন্য কোনো যানবাহন দেখা যায়নি। তবে বৃষ্টি ভেদ করে রাস্তায় টহলে ছিল পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সেনাবাহিনী এবং আনসার সদস্যদের গাড়ি। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে ছিল। রংপুরেও কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। দোকানপাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। রংপুরে দুই প্লাটুন বিজিবি ৪টি ভাগে বিভক্ত হয়ে টহল দিচ্ছে। রংপুরের ৮ উপজেলায় ৮টি এবং সিটি করপোরেশনে একটি সেনাবাহিনীর টহল টিম কাজ করছে। এ ছাড়া পুলিশ ও র‌্যাবের জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিংসহ টহল অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের মতো বরিশালেও শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। দূরপাল্লা ও স্থানীয় রুটের লঞ্চ-বাস এবং বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। নগরের মধ্যেও থ্রি হুইলার বন্ধ রয়েছে। প্রথম দিন কিছুসংখ্যক মানুষ রাস্তায় বের হয়েছে। কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলেও কিছু মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছে কৌতূহলী হয়ে লকডাউন দেখতে। চায়ের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সকালের দিকে বাজারে কিছুটা ভিড় থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজার ফাঁকা হয়ে যায়। সারা দেশের মতো ময়মনসিংহেও লকডাউন কার্যকর করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলায় ২১০টি মামলায় ১ লাখ ৬২ হাজার ৬৯০ টাকা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল খুলনায় কড়াকড়ি লকডাউন পালিত হয়েছে। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশ চেকপোস্ট। নগরীর সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হলেই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে নগরীর ডাকবাংলা ময়লাপোতা সাতরাস্তা মোড়ে ফল ও খাবারের দোকান ছাড়া বাকি সব বন্ধ ছিল। রোগী, বয়স্ক মানুষ ছাড়া কাউকে বের হতে দেয়নি প্রশাসনের সদস্যরা।

সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েন : আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা শহরসহ সেনাবাহিনীর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। অপারেশন ‘কভিড শিল্ড-ফেজ ২’ এর আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত বছরের ন্যায় এ বছরও সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সতর্কতামূলক টহল পরিচালনা করছে। মোতায়েনরত অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী টহল পরিচালনা এবং চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রয়োজনে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের মাধ্যমে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবে। অন্যদিকে, সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় কাজ শুরু করেছে নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্টসমূহ। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ অঞ্চল থেকে ২৩ জন কর্মকর্তাসহ ১৯৬ জন নৌ সদস্যের ৮টি কন্টিনজেন্ট সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকাসমূহে টহল ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল থেকে ১২ জন কর্মকর্তাসহ ১০৮ নৌ সদস্যের ৬টি কন্টিনজেন্ট ভোলা সদর, বোরহান উদ্দিন, দৌলতখান, চরফ্যাশন, মনপুরা, লালমোহন, তজুমুদ্দিন, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী এলাকায় কাজ করছে। অন্যদিকে খুলনা নৌ অঞ্চল থেকে ১১ জন কর্মকর্তাসহ ৮৮ জন নৌ সদস্যের ২টি কন্টিনজেন্ট মোংলা বাগেরহাট, বরগুনা সদর, আমতলী, বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা এবং তালতলী উপজেলায় কাজ করছে। লকডাউন সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ অনুযায়ী, বগুড়ায় প্রথম দিনের কঠোর লকডাউনে শহরের সাতমাথায় কোনো মানুষ দেখা যায়নি। মুন্সীগঞ্জে অতি জরুরি কাজ ছাড়া কাউকে রাস্তায় নামতে দেওয়া হয়নি। অনেকে এই কঠোরতা দেখতে রাস্তায় এসে পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন। নাটোরে প্রথম দিনের লকডাউন চলেছে কঠোরভাবে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় তিন মামলায় ২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলেছে কঠোর লকডাউন। সকাল থেকেই বন্ধ ছিল গণপরিবহন, শপিং কমপ্লেক্স, মার্কেটসহ বিভিন্ন দোকানপাট। নীলফামারীতে সকাল থেকেই প্রধান সড়কে গণপরিবহনের দেখা মেলেনি। তবে সকাল ৮টার পর থেকে কিছু মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। বাগেরহাটে লকডাউনের প্রথম দিনে দূরপাল্লার পরিবহনসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ১৬টি রুটে সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস, দোকানপাট, নৌযান, সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ ছিল। ঝিনাইদহেও চলেছে কঠোর লকডাউন। লক্ষ্মীপুরের সড়কগুলো ছিল জনশূন্য। যশোরে মানুষের চলাচল ছিল একেবারেই কম। লক্ষ্মীপুরে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলেই জরিমানা করা হয়েছে। মাদারীপুরে কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে রাস্তা-ঘাট ছিল পুরো ফাঁকা। জামালপুরে লকডাউনের কারণে সকাল থেকেই শপিং কমপ্লেক্সসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। দিনাজপুরের বিরামপুরে ‘হোসেন আলী সরকার মেমোরিয়াল স্কুল’ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লকডাউনের মধ্যে কোচিং পরিচালনা করায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালককে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সকাল থেকে সব বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস, সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। গোপালগঞ্জে রাস্তায় অন্যান্য দিনের তুলনায় মানুষ ও যানবাহনের চলাচল কম ছিল। রাঙামাটিতে মার্কেট, দোকান পাঠ বন্ধ থাকার কারণে একেবারে ফাঁকা ছিল শহর। চলাচল করেনি কোনো প্রকার যানবাহন।

স্বাভাবিক চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম : কঠোর লকডাউনে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে কনটেইনার বহনকারী ট্রাক-লরি এবং কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করবে শ্রমিক-কর্মচারীরা। বন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা থাকবে স্বাভাবিক সময়ের মতোই। পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত গাড়ি নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে বন্দরের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে স্টিকার।  চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে সরকার এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শুরু করেছে। এই সময়ের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। গত এক বছরে রেকর্ড পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারের কঠোর লকডাউনেও আমরা প্রস্তুতি মতে কাজ করে যাচ্ছি। করোনার মধ্যেও বন্দরে কনটেইনার, কার্গো হ্যান্ডলিং ও জাহাজ আসার সংখ্যা স্বাভাবিক আছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর