বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

কমছেই না মৃত্যু ও সংক্রমণ

এক দিনে ১৬৩ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১ হাজার ৫২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

কমছেই না মৃত্যু ও সংক্রমণ

দেশে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা। এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৫২৫ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চলমান এ মহামারীতে গতকাল প্রথমবারের মতো এক দিনে শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যায় এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এ ১৬৩ জনের ৪৬ জনই খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগের ৪৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সোমবার শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। রবিবার ২৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শনিবার ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশে সাড়ে ৩৬ হাজার নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড ১১ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ১৬৩ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ পেরিয়ে গেছে, যা গত বছরের আগস্টের পর সর্বোচ্চ। করোনা নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি হয়। তার আগের দিন রেকর্ড ৮ হাজার ৮২২ জন আক্রান্ত শনাক্তের খবর এসেছিল। সোমবার তা ছাড়িয়ে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছায় ৯ হাজার ৯৬৪-তে। এক দিন বাদেই তা প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেল।

দৈনিক শনাক্তের সঙ্গে মৃত্যুতেও রেকর্ড হয়েছিল সোমবার, সারা দেশে ১৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। মঙ্গলবার সে সংখ্যা কমেছে শুধু একজন। নতুন আক্রান্ত নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৬-এ। তার মধ্যে ১৫ হাজার ৩৯২ জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৩৯ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃতের হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৫ হাজার ৯৭ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন, যা দিনের মোট শনাক্তের ৪৪ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে এক দিনে শনাক্ত দেড় হাজার ছাড়িয়েছে, খুলনায় ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৮০০।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছর ৮ মার্চ। তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় ২৯ জুন। প্রথম আক্রান্ত শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বছর ৪ জুলাই তা ১৫ হাজার ছাড়ায়।

স্বাস্থ্য অধিদপতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৬৩ জনের মধ্যে ৯৮ জন পুরুষ, ৬৫ জন নারী। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে পাঁচজনের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের ৩১-৪০ বছরের মধ্যে, ২৭ জনের ৪১-৫০ বছরের মধ্যে, ২৯ জনের ৫১-৬০ বছরের মধ্যে এবং ষাটোর্ধ্ব ৯১ জন।

গত এক দিনে সর্বোচ্চ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এরপর ঢাকা বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ জন। সিলেট বিভাগে এদিন সবচেয়ে কম দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে বিভাগভিত্তিক শনাক্তের হার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের মোট শনাক্তের ৪৪ দশমিক ১১ শতাংশ রয়েছেন ঢাকা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ৪৫ জন। শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৭ জন। এ বিভাগে শনাক্তের হার ৩১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এক দিনে আক্রান্ত বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। ঢাকা জেলায় (মহানগরীসহ) শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। মারা গেছেন ১৬ জন।

ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন পাঁচজন। শনাক্তের সংখ্যা ৩৩৪। শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। চট্টগ্রামে মারা গেছেন ২৪ জন। এ বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৪০। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। রাজশাহীতে মারা গেছেন ২৪ জন। শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২২৫ জন। শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। রংপুর বিভাগে মারা গেছেন ১১ জন। শনাক্তের সংখ্যা ৬১৮। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। খুলনা বিভাগে মারা গেছেন ৪৬ জন। শনাক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮৬৫। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে মারা গেছেন ছয়জন। শনাক্তের সংখ্যা ৪৫৯। শনাক্তের হার ৫২ দশমিক ৫১ শতাংশ। একই সময়ে সিলেট বিভাগে মারা গেছেন দুজন। শনাক্তের সংখ্যা ৩৮৭। শনাক্তের হার ৩৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জ জেলার একমাত্র করোনা ইউনিটে নেই কোনো আইসিইউ কিংবা ভেন্টিলেটর। তাই জটিল উপসর্গ হলেই রোগীদের পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে ঢাকায়। চলতি মাসের পাঁচ দিনে ছয় রোগীকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে ইউনিটে মারা গেছেন দুজন। করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. জোবায়ের ইসলাম জানান, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে বর্তমানে ২২ জন ভর্তি আছেন। রোগীদের ভালোমানের চিকিৎসায় লোকবল সংকট ও আইসিইউ না থাকায় তা চেয়ে উচ্চমহলে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর