বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

সৌদির নতুন আইনে আতঙ্কে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা

২৩ আগস্টের মধ্যে ব্যবসার তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে, না করলে ৫ মিলিয়ন রিয়াল জরিমানা অথবা সমুদয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সৌদি সরকার সম্প্রতি একটি আইন করেছে, যে আইনের কারণে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে দেশটিতে বসবাসরত অন্য দেশের ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারী যদি তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য দিয়ে নিবন্ধন না করেন, তবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নতুন এ আইনটির নাম বাণিজ্যিক গোপনীয়তাবিরোধী আইন। এ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন নিতে ব্যর্থ ব্যবসায়ীকে ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) রিয়াল জরিমানা অথবা পাঁচ বছরের কারদন্ড  অথবা সমুদয় ব্যবসা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদিতে এমন অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন, যারা দীর্ঘসময় ধরে দেশটিতে চাকরির পাশাপাশি সেখানে দোকানপাট খুলে ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এমন অনেকেই আছেন যারা বেনামে ব্যবসা করছেন। এতদিন এ বিষয়ে কোনো কোনো বিধিনিষেধ না থাকলেও এখন নতুন আইনে ব্যবসার তথ্য দিয়ে নিবন্ধনের আইনি বাধ্যবাধকতা দেওয়ার ফলে অনেক প্রবাসী ব্যবসায়ীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতঙ্কের বড় বিষয়টি হচ্ছে, সৌদিতে অনেক বাংলাদেশি আছেন যারা এসেছেন ফ্রি ভিসায় ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে। কিছু বাড়তি আয়ের আশায় কেউ কেউ বেনামে ব্যবসা করছেন। এক্ষেত্রে তারা নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন কি-না, নতুন আইনে সে সুযোগ থাকবে কি-না তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। সৌদিতে বসবাসরত এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি দেড় দশক ধরে দেশটিতে বসবাস করছেন। চাকরি করে কিছু টাকা জমিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে মিলে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের ব্যবসা করছেন। এটি খুব বেশি বড় বিনিয়োগ নয়। বাংলাদেশ থেকে সবজি, চাল, ডালসহ খাদ্য পণ্য আমদানি করে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির দোকানগুলোতে তা সরবরাহ করেন। এখন নতুন আইনে নিবন্ধন গ্রহণের পর তার ব্যবসায় কোনো বিধিনিষেধ জারি হয় কি-না এ নিয়ে ভয়ে আছেন।

সৌদিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশটির নতুন এ নীতির পেছনে বড় কারণ হলো নতুন শ্রমনীতি এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। দেশটির তেলকেন্দ্রিক ব্যবসা থেকে আয় ক্রমশ কমে আসছে। এ কারণে তারা তাদের অর্থনীতিতে দেশীয় নাগরিকদের কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে জোর দিচ্ছে। সৌদি সরকার কর্তৃক এরই মধ্যে কিছু পেশা ও সেক্টরে নন-সৌদিদের কাজ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব পেশায় যদি কোনো প্রবাসী নিযুক্ত থাকেন, তবে তাকে অবৈধ বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। বাণিজ্যিক গোপনীয়তাবিরোধী আইনটি সে লক্ষ্যে ব্যবহার করা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী যারা সৌদিতে বিনিয়োগ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা খাদ্যাভ্যাসের কারণে তারা দেশীয় খাদ্য পছন্দ করেন। এ কারণে দেশ থেকে প্রতি বছর মধ্যপ্রাচ্যে সুগন্ধি চাল, হিমায়িত মাছ, সবজি, ফলমূলসহ প্রক্রিয়াজাত শুকনো খাদ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী এসব খাদ্য ও ওষুধের দোকানপাটের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখন সৌদির নতুন আইনে নিবন্ধনের কড়াকড়ির কারণে যদি তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে সেটি দেশের রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)র ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সৌদি আরবের বাণিজ্যিক গোপনীয়তাবিরোধী আইনটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি অন্য সব দেশের নাগরিকদের জন্য করা হয়েছে। ফলে এ আইনের বিষয়ে পৃথকভাবে বাংলাদেশের আপত্তি জানানোর কোনো সুযোগ নেই। যারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নিয়ম মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, নতুন আইনে নিবন্ধন নিতে তাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথাও নয়। তবে এটি ঠিক, বাংলাদেশ থেকে অনেকে গিয়ে সেখানে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি অর্থ আয় করতে কারও সঙ্গে মিলে বেনামে হয়তো কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। তাদের উদ্বেগ কাটাতে নিয়ম মেনে নিবন্ধনের জন্য প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ছোটখাটো এসব ব্যবসা-বাণিজ্য যেহেতু দেশের রপ্তানি খাতের সঙ্গে জড়িত, সে কারণে বিষয়টি সমাধানের জন্য বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান ইপিবির এ প্রধান নির্বাহী।

সর্বশেষ খবর