বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস পালন ৬ ডিসেম্বর

তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৈঠক

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সহযোগিতা নিয়ে গতকাল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই মন্ত্রী প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার’ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে ‘মৈত্রী দিবস’ পালন করবে। ১৯৭১ সালের ওই তারিখে ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এ উপলক্ষে উভয় দেশের সাংস্কৃতিক দল ঢাকা ও নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠান করবে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মীয়মাণ জীবন-চলচ্চিত্র আগামী মার্চে স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পেতে পারে। বিকালে তিনি পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করেন।

ভারত সরকার প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্যমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, ২০২২ সালের মার্চে ‘বঙ্গবন্ধু’র চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিকভাবে মুক্ত করা হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ‘লিবারেশন ১৯৭১’ নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া উভয় দেশের ডিজিটাল ফিল্ম বিনিময় হবে।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রথমে সকালে ভারতের তথ্যমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের আকবর রোড বাসভবনে মিলিত হন। সেখানে ভারতের মন্ত্রী গোয়ায় অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগদানের জন্য ড. মাহমুদকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানান। পরে অনুরাগ নিজেই টুইট করে বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের মন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তৃত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা জনতার সঙ্গে জনতার সম্পর্ক বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, যৌথ চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে।’ বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশিত আলোকচিত্র সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘এটা আজ দিনের সেরা ছবি’।

ড. হাছান মাহমুদ পরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, ‘আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীদের উভয় দেশে সফরের নিয়মকানুন ও ভিসা পদ্ধতি সরলীকরণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। এমনকি মেডিকেল ভিসার পথ সুগম করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।’

সাউথ ব্লকে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর টুইট করে বলেন, ‘বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়ে আমি অত্যন্ত খুশি। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিরন্তর অগ্রগামী হচ্ছে। এ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্পর্কে মিডিয়ার ভূমিকা এবং জনগণের মধ্যে যে ধারণা তৈরি হয় তাই নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।’

বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত করা নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। মূলত কানেকটিভিটি এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি নিয়ে কথা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ভারত বাংলাদেশকে যথাসময়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। ভারতের করোনা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হয়েছে। এখন পজিটিভিটি হার ২ শতাংশে নেমে এসেছে। শিগগিরই হয়তো আমরা ভ্যাকসিন পেতে পারি।’ তিনি তিস্তার পানি চুক্তি দ্রুত সম্পাদন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ড. মাহমুদ বলেন, ‘যদি ইউরোপ ভিসামুক্ত সফরে অনুমতি দিতে পারে তাহলে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় কেন পারব না?’ তিনি ভিসাব্যবস্থা আরও সরলীকরণের প্রস্তাবও দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। বৈঠকে ভারতের পশ্চিম বিভাগের সচিব ও সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাশ ও হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান উপস্থিত ছিলেন। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হাইকমিশনার, ডেপুটি হাইকমিশনার নুরুল ইসলাম এবং মিনিস্টার প্রেস শাবান মাহমুদ ছিলেন। সন্ধ্যায় তথ্যমন্ত্রী ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সে আকাশবাণীর প্রয়াত সাংবাদিক ইউ এল বড়ুয়া রচিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ওপর পুস্তক প্রকাশ করেন।

প্রেস ক্লাবের মধ্যে সমঝোতা : সোমবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল বিনয় কুমার সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেন। সমঝোতাপত্র অনুসারে উভয় দেশের ক্লাব যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মিডিয়া কর্মসূচি পালন করবে এবং একে অন্যের দেশের মিডিয়া প্রতিনিধি দল সফর করবেন।

সর্বশেষ খবর