শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ডেল্টার চেয়ে ৩ গুণ সংক্রামক ওমিক্রন

আফ্রিকার সাত দেশ থেকে ফিরলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আফ্রিকার সাত দেশ থেকে ফিরলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে আফ্রিকার সাত দেশের যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ খরচে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে তাদের।

গতকাল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আজ দুপুর ১২টা থেকে এ নিয়ম কার্যকর হবে। বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগ এ নির্দেশনা জারি করেছে। আফ্রিকার এ সাত দেশ হলো : বতসোয়ানা, লেসোথো, ইসোয়াতিনি, ঘানা, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে। এসব দেশ থেকে সরাসরি বাংলাদেশে এলে, অথবা গত ১৪ দিনের মধ্যে এসব দেশের কোনোটিতে ভ্রমণ করে থাকলে বাংলাদেশে আসার পর ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ওই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

কোয়ারেন্টাইনের ওই দুই সপ্তাহ সরকার নির্ধারিত কিছু হোটেলে নিজ খরচে থাকতে হবে তাদের। সে জন্য বাংলাদেশের পথে রওনা হওয়ার আগেই হোটেল বুকিং দিতে হবে। সেই সঙ্গে যাত্রা শুরুর আগের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করিয়ে ‘কভিডমুক্ত’ সনদ নিয়ে আসতে হবে। তবে ১২ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা থাকবে না। বাংলাদেশে আসার পর হোটেলে থাকা অবস্থায় ৭ম ও ১৪তম দিনে করোনাভাইরাস শনাক্তের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। সংক্রমণ ধরা পড়লে তাকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হবে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত বিদেশগামীদের করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষাগার পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, কোয়ারেন্টাইন থেকে কেউ পালালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বছর দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে বিদেশ থেকে ফিরলে কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তখন কোয়ারেন্টাইন থেকে পালানোর কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। মহামারীর মধ্যে দেড় বছর পর করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে আবার আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ফিরলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হলো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে, তাদের পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হবে। কোনো হোটেল থেকে পালিয়ে গেলে ওই হোটেলকেও জরিমানা করা হবে।

ডেল্টার চেয়ে ৩ গুণ সংক্রামক ওমিক্রন  : করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন নিয়ে প্রাথমিক একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা। সেখানে দেখা গেছে, ডেল্টা ও বেটা ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের পুনরায় সংক্রমিত করার ক্ষমতা ৩ গুণ বেশি। এ ছাড়া পূর্বে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতা ওমিক্রনের রয়েছে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা গেছে সেগুলো ওমিক্রনের বেলায়ও কার্যকর। সূত্র : এপি, রয়টার্স। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে বলা হয়েছে, নতুন গবেষণাটি চালানো হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিভাগের সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে। গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৮ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৬৭০ জন পুনরায় সংক্রমিত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আক্রান্ত হওয়ার ৯০ দিনের ব্যবধানে করোনা পরীক্ষার ফল আবার পজিটিভ এলে ভাইরাসটির পুনরায় সংক্রমণ হয়েছে বলে ধরা হচ্ছে। নতুন গবেষণাটি নিয়ে কথা বলেছেন সাউথ আফ্রিকান ডিএসআই-এনআরএফ সেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন এপিডেমিওলজিক্যাল মডেলিং অ্যান্ড এনালাইসিসের পরিচালক জুলিয়েট পুলিয়াম। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার প্রথম তিন ঢেউয়ে যারা সংক্রমিত হয়েছিলেন, তাদের অনেকের শরীরেই আবার ভাইরাসটি ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই আগে ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন। জুলিয়েট পুলিয়াম সতর্ক করে বলেন, নতুনভাবে সংক্রমিত রোগীরা টিকা নিয়েছিলেন কি না, সেই তথ্য এ গবেষণায় যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে টিকা যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে, তা ভেদ করতে ওমিক্রন কতটুকু সক্ষম, তা সামনে আসছে না। গবেষকরা বলেছেন, টিকার কার্যকারিতার বিষয়টি নিয়ে পরে গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। জুলিয়েট বলেন, এর পাশাপাশি ওমিক্রনের সংক্রমণের জেরে শারীরিক জটিলতা কতটা মারাত্মক, তা জানতে জরুরি ভিত্তিতে তথ্য প্রয়োজন। দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষণাটিকে ‘উচ্চমানের’ বলে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মাইকেল হেড। তিনি বলেন, গবেষণায় যা উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগের।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় দিনে গড়ে ৩০০ জনের মতো মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছিলেন। এর কদিন বাদেই দেশটিতে ওমিক্রন শনাক্তের খবর মেলে। তখন থেকেই দেশটিতে লাফিয়ে বেড়েছে সংক্রমণের হার।

ডব্লিউএইচওর ভাষ্য : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা গেছে সেগুলো ওমিক্রনের বেলায়ও কার্যকর। ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক ড. তাকেশি কাসাই সাংবাদিকদের বলেন, ইতিবাচক খবর হলো, ওমিক্রন নিয়ে এখন পর্যন্ত আমরা যেসব তথ্য পাচ্ছি তাতে আমাদের প্রতিক্রিয়ার দিক বদলানোর দরকার পড়বে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর