রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ফ্রান্সে নির্বাচন আজ

কে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ না লা পেন?

প্রতিদিন ডেস্ক

কে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ না লা পেন?

ফ্রান্সে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত দফার ভোট আজ। ভোটের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে গভীর আগ্রহ। এতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁই টিকে যাবেন? নাকি কট্টর ডানপন্থি মেরিন লা পেন নির্বাচিত হবেন- তা নিয়ে চলছে জোর জল্পনা-কল্পনা। সূত্র : রয়টার্স, সিএনএন। ফ্রান্সের নির্বাচন পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২ রাউন্ডে হয়ে থাকে। প্রথম রাউন্ডে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে দ্বিতীয় রাউন্ড বা রানঅফে অংশ নিতে হয়। প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া ২ প্রার্থী রানঅফে অংশ নিতে পারেন। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গত ১০ এপ্রিল প্রথম রাউন্ডের ভোটে ১২ জন প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা সারা দেশের ৫০০ মেয়র অথবা স্থানীয় কাউন্সিলরদের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে তবেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা অর্জন করেন। ফলাফল অনুযায়ী, প্রথম দফায় ম্যাক্রোঁ এবং লা পেন সবচেয়ে বেশি ভোট পান। তবে, ফ্রান্সের নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু কেউই ৫০ শতাংশে বেশি ভোট পাননি তাই আজ তারা রানঅফ বা দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদিকে বিএফএম টিভির এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ ভোটার তাদের দুজনের মধ্যে ম্যাক্রোঁকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেশি পছন্দ করেন। তবে ২০১৭ সালের নির্বাচনের চেয়ে এবার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ম্যাক্রোঁ এবং লা পেন উভয়েরই ২০১৭ সালের তুলনায় এ বছর প্রথম রাউন্ডে মোট ভোটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রথম রাউন্ডের আগের জরিপগুলোতে দেখা যায়, মার্চে লা পেনের সমর্থন ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

গত ১০ এপ্রিল প্রকাশিত আইফপ-ফিডুসিয়ালের জরিপে দেখা গেছে, ম্যাক্রেঁঁ দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লা পেনের বিরুদ্ধে মাত্র ৫১ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশ ব্যবধানে জয়ী হতে পারেন। প্রথম রাউন্ডের ফলাফল আসার পর কয়েক দিনের মধ্যে ম্যাক্রোঁর সমর্থন কিছুটা বেড়েছে বলে একই জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রায়ই বলেন, ফরাসিরা প্রথম রাউন্ডে মন থেকে ভোট দেন। আর দ্বিতীয় রাউন্ডে মাথা খাটিয়ে ভোট দেন। যার অর্থ তারা প্রথমে তাদের আদর্শ প্রার্থীকে বেছে নেন, তারপরে দ্বিতীয় রাউন্ডে দুজনের মধ্যে দেশের জন্য ভালো ব্যক্তিকে বেছে নেন। ম্যাক্রোঁ ২০১৭ সালে এই চিত্রপট দেখেছিলেন। সেবার তিনি এবং লা পেন প্রথম রাউন্ডে যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ২১.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। অথচ দ্বিতীয় রাউন্ডে ম্যাক্রোঁ পান ৬৬.১ শতাংশ ভোট এবং লা পেন পান ৩৩.৯ শতাংশ ভোট।

প্রসঙ্গত, ম্যাক্রোঁ হলেন একজন প্রাক্তন ব্যাংক বিনিয়োগকারী এবং ফ্রান্সের সবচেয়ে অভিজাত স্কুলগুলোর সাবেক শিক্ষার্থী। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি রাজনীতিতে নবীন ছিলেন। শুধু তাই নয়, চলতি বছর তিনি দ্বিতীয়বার রাজনৈতিক নির্বাচন করছেন। তবে তিনি এখন আর নবীন নন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বায়ত্তশাসন এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্থানকে শক্তিশালী করতে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা তাকে বিদেশে এবং দেশে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। যদিও এইউকেইউএস সাবমেরিন চুক্তি প্রতিরোধের চেষ্টা এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ এড়ানোর ব্যর্থ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা তার ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অন্যদিকে লা পেন ফরাসিদের সবচেয়ে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি জিন-মেরি লা পেনের কন্যা। যিনি ন্যাশনাল ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যে দলটি লা পেনের বর্তমান রাজনৈতিক দলের পূর্বসূরি। তরুণ লা পেন দলটিকে পুনরায় আলোচনায় আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। প্রেসিডেন্ট পদে এবার তিনি তৃতীয়বার নির্বাচন করছেন। চলতি বছর ও ২০১৭ সালের প্রথম দফার ভোটে বাবাকে ছাপিয়ে গেছেন তিনি। ২০১৭ সালে লা পেন ফ্রান্সের অভিবাসী শ্রমিক শ্রেণিকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও তার এই প্রচারণা খুব বেশি কাজে আসেনি। তারপর থেকে তিনি তার সবচেয়ে বিতর্কিত নীতির প্রস্তাবগুলো পরিত্যাগ করেন। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করা। ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে লা পেনের পারফরম্যান্স ছিল তার তিনবারের মধ্যে সেরা ফলাফল।

সর্বশেষ খবর