শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ডলার কারসাজিতে জিরো টলারেন্স

ব্যাংক এক্সচেঞ্জ হাউসের বিরুদ্ধে অভিযান, ছয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব কমে আসছে দর

আলী রিয়াজ

ডলার কারসাজিতে জিরো টলারেন্স

ডলার নিয়ে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে সরকার। অর্থনীতির এ সংকটের মধ্যে যারা ডলারবাজার অস্থিতিশীল করে মুনাফা করছে তাদের ধরতে মাঠে নেমেছে সরকারের একাধিক সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংক, আর্থিক ও মুদ্রা বিনিময় (মানি এক্সচেঞ্জ) প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ডলার লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখছে। ডলার নিয়ে কারসাজি ও অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি-প্রধানকে অপসারণ করা হয়েছে। এসব ব্যাংক সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডলার বিক্রি করে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে। এবার সংশ্লিষ্ট ওই ছয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব পদক্ষেপের পর ডলারের দরও কিছুটা কমে এসেছে। সর্বোচ্চ ১১৯ টাকায় দর উঠলেও সর্বশেষ ১১০ টাকায় নেমেছে প্রতি ডলারের দাম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব পদক্ষেপে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দর নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি করতে দেওয়া হবে না। যারা অনিয়ম করছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ডলার দরে মুনাফা করার সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করা হয়েছে। অচিরেই ডলার নিয়ে সব কারসাজি বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ছয় ব্যাংকের এমডিকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। কারা দায়ী তা জানাতে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত মে থেকে দেশে ডলারের সংকট চলছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানি দায় শোধ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম এ সময়ে ৮৬ থেকে ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় আনছে ১০৬ থেকে ১০৭ টাকায়। আমদানিকারকদের কাছে প্রতি ডলারের জন্য ১০৩ থেকে ১০৪ টাকা নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এখন ব্যাংকগুলোর ডলার কেনাবেচায় সর্বোচ্চ ১ টাকা পার্থক্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডলার কেনাবেচার মাধ্যমে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফা করা যাবে। সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে যৌথ বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নেয়। জানা গেছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়। এ সংকট কাজে লাগিয়ে কিছু ব্যাংক ও মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত মুনাফা করতে ডলার মজুদ শুরু করে। বাজারে ডলারের দর নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে ৮৮-৮৯ টাকার ডলার কয়েক দিনের ব্যবধানে খোলাবাজারে ১১০ টাকায় উঠে যায়। ব্যাংকগুলোয় ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারেননি। যে সংকট এখনো রয়েছে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা খোলাবাজারে ডলার বিনিময় প্রতিষ্ঠানে অভিযান শুরু করে। এ অভিযানে বাংলাদেশ ব্যাংক আট মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের সনদ স্থগিত করে ও ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ নোটিস দেয়। এরপর দু-তিন দিন ডলার ১০৭ থেকে ১০৮ টাকায় স্থিতিশীল হয়। হঠাৎ গত সপ্তাহে ডলারবাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। তিন দিনের ব্যবধানে ডলারের দর ১১৯ টাকায় পৌঁছায়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংকের ফরেক্স বিভাগে অভিযান শুরু করে ও তাদের ডলার বিনিময় তথ্য তলব করে। এ অভিযানে ডলার কারসাজিতে ছয় ব্যাংকের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পান কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা। ফলে ডলারে অতিরিক্ত মুনাফা করে বাজার অস্থিতিশীল করায় দেশি-বিদেশি ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এসব ব্যাংকের ট্রেজারি-প্রধানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ ছয়টি ব্যাংক জড়িত এ কারসাজিতে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর এমডিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযুক্ত ব্যাংকগুলো পরিদর্শন করে এসব ব্যাংকের ডলার কেনাবেচার সব তথ্য পর্যালোচনা করে। পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কোনো কোনো ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করে এক মাসে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে। যার মাধ্যমে ডলারের বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সামনে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর