বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে তিনটি বাধা খুঁজে পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। ব্যাপক সংস্কার না হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। গতকাল ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি ইকোনমিক মেমোরেন্ডাম চেঞ্জিং অব ফেব্রিক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসব চ্যালেঞ্জের কথা বলেছে সংস্থাটি। অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ও বর্তমান মুখ্য অর্থনীতিবিদ নোরা ডিহেল। প্যানেল আলোচক ছিলেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান ও এসবিকে টেক ভেঞ্চারের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশির কবির।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বাধা তিনটি হলো- বাণিজ্য প্রতিযোগিতা হ্রাস, একটি দুর্বল ও অরক্ষিত আর্থিক খাত এবং ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত নগরায়ণ। যদি এ তিনটি প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করা যায় তাহলে উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দ্রুতবর্ধনশীল দেশের মধ্যে একটি। তবে আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অগ্রগতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে তিন খাতে সংস্কারের কথা বলছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, এসব খাতে সংস্কার না হলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির গতি মন্থর হতে পারে। পাশাপাশি ২০৩৫ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে। আর মোটামুটি ধরনের সংস্কার হলে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ভালো রকম সংস্কার হলে সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বিশ্বব্যাংক যে তিন খাতে সংস্কারের কথা বলছে তা হলো- রপ্তানিমুখী বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক খাতের সংস্কার এবং স্থিতিশীল নগরায়ণ। এ তিন খাতে সংস্কার করতে পারলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে এবং ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অগ্রগতি করেছে। প্রবৃদ্ধির এ গতিপথ ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির হার আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। এজন্য একটি শক্তিশালী সংস্কার এজেন্ডা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক-অশুল্ক বাধা কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতের বাইরে রপ্তানি পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ এবং ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে। এ ছাড়া বেসরকারি ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি, এলডিসি উত্তরণের পর টিকে থাকতে বাণিজ্য ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রতিবেদনে যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আমরা সমাধানে উদ্যোগ নিচ্ছি। তবে সব একসঙ্গে হবে না। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিংসহ অর্থনৈতিক নানা খাতে সংস্কার দরকার। এ খাতে অনেক ব্যর্থতা আছে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি। এটা সুখকর নয়। সরকার চেষ্টা করছে সংস্কার করতে। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘প্রতিবেদনে যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, সেসব সংস্কারের পক্ষে সরকারও কিন্তু অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কেন এসব সংস্কার হচ্ছে না তা বড় প্রশ্ন। তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হবে। তারপর আমরা হয়তো অনেক দেশের কাছ থেকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাব না। সেজন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তিনি আরও বলেন, শুধু ব্যাংক খাতই নয়, সংস্কার করার মতো বহু খাত এখনো বাকি আছে। দেশের বাণিজ্যনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে এখনই। চামড়া খাত পোশাকের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারত। এটি শক্তিশালী করার এখনো সুযোগ রয়েছে।