শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

শোডাউনে থাকবে আওয়ামী লীগ

কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা উপজেলা সম্মেলন ডিসেম্বর জুড়ে, ঢাকায়ও নানা কর্মসূচি

রফিকুল ইসলাম রনি

শোডাউনে থাকবে আওয়ামী লীগ

টানা কর্মসূচি নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউন করবে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা এবং দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন অব্যাহত রাখবে ক্ষমতাসীনরা। রাজধানী ঢাকায় জোনভিত্তিক ব্যাপক কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির নেতারা। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি মোকাবিলায় এমন পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে বিশ্বাসী নই। দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর। চলতি মাসসহ ডিসেম্বরে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন রয়েছে কয়েকটি। এ ছাড়াও দিবসভিত্তিক কর্মসূচি রয়েছে। জেলা-উপজেলা সম্মেলন চলছে। আমরা সাংগঠনিক কাজের মধ্যেই আছি। চলতি মাস থেকে এ কর্মসূচি আরও জোরদার করা হবে। রাজপথে সক্রিয় কর্মসূচি নিয়ে আমরা স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন প্রতিহত করব।’

দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে না গেলেও রাজধানীতে টানা কর্মসূচি নিয়ে শোডাউন করবে আওয়ামী লীগ। চলতি মাসের ২৬ তারিখ মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলন, ৯ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও ২৪ ডিসেম্বর দলের জাতীয় সম্মেলন। প্রতিটি সম্মেলন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ খালেদা জিয়ার কথায় চলবে। এটা সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার কথায় এখন বিএনপিই চলে না। দেশ চলা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু তারা একটা ‘গ-গোল’      করতে চায়। বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে তা প্রতীয়মান হয়েছে। সে কারণে তারা দলীয় কর্মসূচিতে লাঠিসোঁটা নিয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খুনি, সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, মানবতাবিরোধীদের রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। এই দলের আন্দোলন মানেই আগুন-সন্ত্রাস ও মানুষ পোড়ানো, হত্যা, খুন এবং গুম করা। বিএনপির টার্গেট পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। তারা কোনোভাবেই নির্বাচনে বিশ্বাসী নয়। বিএনপির রাজনীতির নামে মানুষ হত্যার অপরাজনীতি কঠোরভাবে দমন করা হবে। আমরা তাদের ছাড় দেব না। তবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলে স্বাগত জানানো হবে।’

জানা গেছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন রাজধানী ও প্রবেশমুখগুলোতে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর প্রবেশমুখ সাভার, উত্তরা, ধোলাইপাড়, শনির আখড়া, গাবতলী, আমিনবাজার, গাজীপুরের টঙ্গী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে বড় ধরনের শোডাউন করবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিসেম্বর মাস স্বাধীনতার মাস, এই মাসে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রাজপথ দখলে নিতে দেবে না স্বাধীনতাকামী জনগণ। জেলা-উপজেলা সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবেন। বিশেষ করে ঢাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাস ধরেই ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ১-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জোনভিত্তিক কর্মসূচি পালন করা হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা জোনভিত্তিক কর্মসূচি শুরু করেছি। ইতোমধ্যে গুলশান জোনের কর্মসূচিতে জনস্রোত নামিয়ে প্রমাণ করেছি এই রাজধানী স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির। ডিসেম্বর মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে থাকব। যেখানেই বিএনপির নৈরাজ্য সেখানেই প্রতিহত করা হবে।’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা না দিতে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা আছে। কিন্তু আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত যদি নাশকতার পথ বেছে নেয় তাহলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বলেন, রাজধানীর প্রবেশপথে ঢাকা জেলার উদ্যোগে ১০ ডিসেম্বর সাভারের মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে লক্ষাধিক নেতা-কর্মীর জমায়েত করা হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওই জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন।

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। প্রতিদিনই কোনো কোনো উপজেলা বা জেলায় সম্মেলন করা হচ্ছে। প্রতিটি সম্মেলনে ব্যাপক সমাগম উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে চাঙা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য রুখতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে।

আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোক সমাগমের টার্গেট : আওয়ামী যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ শুক্রবার। এবার প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে তারা। এ উপলক্ষে আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব মহাসমাবেশ করবে সংগঠনটি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ১০ লাখ লোকের জমায়েতের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচিতে বড় শোডাউন দিতে চায় সংগঠনটি। সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এ সমাবেশ হবে তারুণ্যের, সাহসের। সমাবেশ হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। সমাবেশ সফল করতে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে বর্ধিত সভা, কর্মিসভা করেছেন। যুবলীগের এ মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা কাজ করছে নেতা-কর্মীদের মাঝে। সারা দেশের বিভিন্ন শাখা থেকে সমাবেশে যোগ দেবেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও যুবলীগের সমাবেশে যোগ দেবেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টার লাগানো হয়েছে। বেলা ১১টায় মূল মঞ্চের সামনের ছোট মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। চলবে জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার পর শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। সেখানে থিম সংগীতসহ প্রায় ২৫ মিনিট দেশবরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা করা হবে।

যুব সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বিশাল শোডাউন দিয়ে সেখানে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফেস্টুন টানিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে কর্মী-সমর্থক ও যুবলীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের আবারও সক্রিয় করতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন সম্রাট। আজকের সমাবেশে ৬০ হাজার লাল গেঞ্জি ও যুবলীগের দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে সকাল ৯টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত থাকবেন তিনি।

সর্বশেষ খবর