ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল বক্তব্য দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ছাড়া অন্যদের নেমে যাওয়ার কথা বেশ কয়েকবার মাইকে বলা হয়।
তারপরও অনেকেই নামেননি। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য চলার মধ্যেই মঞ্চ ভেঙে পড়ে। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এত নেতা কেন? এত নেতা আমাদের দরকার নেই। দরকার কর্মী। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট কর্মী দরকার।’ গতকাল বিকাল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভেঙে পড়ে। ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ছিল শোভাযাত্রার আয়োজন। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ওই অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের ছিলেন উদ্বোধক।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ওই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এরপর বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দামের বক্তব্যের পর উদ্বোধকের বক্তব্য দিতে আসেন ওবায়দুল কাদের। পুরো সময় মঞ্চে ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় মঞ্চে অননুমোদিতভাবে অবস্থান করতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের অনেককেই। ছিলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক-ফটোসাংবাদিকরাও। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য চলার মধ্যেই বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে ভেঙে পড়ে মঞ্চ।প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, মঞ্চ ভেঙে পড়ে যান বক্তব্যরত ওবায়দুল কাদেরও। এতে ওবায়দুল কাদেরসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের অনেককেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলিকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঞ্চে ধারণক্ষমতার বেশি লোক ওঠায় সেটি ভেঙে পড়েছে বলে ধারণা প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিকাল ৪টা ১৭ মিনিটে ছাত্রলীগের শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। এ সময় কাদের বলেন, ‘এত নেতা আমাদের দরকার নেই। দরকার কর্মী। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট কর্মী দরকার। যে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সামনের লোকের চেয়ে মঞ্চে লোক বেশি। এত নেতা কেন? নেতা উৎপাদনের এত বড় কারখানা আমাদের দরকার নেই। ছাত্রলীগ হোক কর্মী উৎপাদনের কারখানা। ঠিক আছে? এ কথা বলে তিনি ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।’
এ বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, তেমন কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা নয়। মঞ্চে অতিরিক্ত লোক ওঠার কারণে ভেঙে পড়ে। অনেকে আহত হয়েছেন, তবে খুবই সামান্য।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঞ্চে ছিলেন। মঞ্চ ভেঙে পড়ায় তার পায়ে সামান্য ব্যথা লেগেছে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া বলেন, এ ঘটনায় আট নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তিনি জানান, আহতরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাচিপ সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সদস্য জসিম উদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিসুজ্জামান রানা, বিএমএর ইসি মেম্বার মো. জাবেদ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি রবিকুল ইসলাম বাঁধন ও সাবরিনা চৌধুরী। তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলির অবস্থা একটু খারাপ হওয়ায় তাকে স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৪টার পর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তা থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয় রংবেরঙের ফেস্টুন ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের চিত্রসংবলিত বিশালাকার ব্যানার, পতাকা নিয়ে। শোভাযাত্রায় অংশ নেয় ঢাকাস্থ ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিট। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড় থেকে মৎস্য ভবন হয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গিয়ে শেষ হয়।
এই জনপদে দুজন মানুষ কখনো মরবেন না : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার কখনই শেষ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগের শোভাযাত্রার মঞ্চ ভেঙে পড়ার আগে দেওয়া উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, এই জনপদে দুজন মানুষ কোনো দিন মরবেন না। একজন বঙ্গবন্ধু, তাঁর স্বাধীনতা দিয়ে যে উত্তরাধিকার সেই উত্তরাধিকারের মৃত্যু নেই। মৃত্যু নেই শেখ হাসিনার। মুক্তির কান্ডারি তিনি। বাঙালি জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন এবং মুক্তি অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছেন। লিগ্যাসি অব বঙ্গবন্ধু উইল নেভার ডাই। লিগ্যাসি অব শেখ হাসিনা উইল নেভার ডাই। ছাত্রলীগের গৌরবরবি কে বলে অস্তাচলে? আমরা আজকে অঙ্গীকার করব, ছাত্রলীগের গৌরবরবিকে আমরা সৌরভ ছড়াব। অস্তাচলে যেতে দিতে পারি না। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বকে বলব, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নবতর পথযাত্রার সূচনা করতে হবে। সারা বিশ্বে আমরা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং টাইম পার করছি। সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ। আমাদের এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবেই।