বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আমলনামা দেখেই মনোনয়ন

সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনার হুঁশিয়ারি

রফিকুল ইসলাম রনি

দলীয় এমপিদের গণসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বেশ কঠিন হবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনে আমলনামা দেখেই এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। যারা জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন, তারা নৌকা (প্রতীক) পাবেন। আর যারা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন তাদের মনোনয়ন দেব না। আমার কাছে সবার আমলনামাই আছে। গত রাতে সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। এ নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। কেউ যদি মনে করেন, ‘আপা আছে, মনোনয়ন দেবে আবার জিতিয়েও আনবে’- এবার তা হবে না। কাউকে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আমি নেব না। এমনকি দলীয় ফান্ড থেকে কাউকে নির্বাচন করার জন্য খরচও দেওয়া হবে না। নিজ যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে। কাউকে পাস করিয়ে সংসদে আনব না। এতে যে কয়েকজন হয় তা-ই নিয়ে সংসদ হবে। নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত জরিপ করছি। সেই জরিপের আমলনামা অনেক ভারী। অনেক এমপি আছেন, এলাকায় যান না। গেলেও কোন্দল বাড়ান। এদের আমি মনোনয়ন দেব না- এটাই সাফ কথা। নির্বাচনী এলাকায় সরকারের উন্নয়ন প্রচার করার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৪ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক বড় অর্জন আছে। সেগুলো জনগণের সামনে প্রচার করতে হবে। এ সংসদে টানা পাঁচ-ছয় বারের এমপি আবার কেউ কেউ দুবার-তিনবারের এমপি আছেন। আপনারা যে কয়েক মেয়াদই থাকেন, এমপি থাকা অবস্থায় কী কী করেছেন সেগুলো লিফলেট আকারে বের হবে, মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হবে। এজন্য মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং দলের নারী কর্মীদের কাজে লাগাতে হবে। তাহলে তারা সবাই ঘরে ঘরে যেতে পারবে। দায়িত্বে থেকে কী কী করেছেন, আগামীতে এলে কী কী করবেন সেগুলো তুলে ধরুন। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের চিত্রও মানুষকে মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমার পরিষ্কার কথা, জরিপ দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। জরিপে যারা পিছিয়ে তাদের কোনোভাবেই দলীয় মনোনয়ন দেব না। কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে হবে। দলের নেতা-কর্মীদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাতে হবে।

সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সে দায়িত্ব আমরা সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে আমাদের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিতে চাই। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন প্রয়োজন হলে আমরা সবাই তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব। এরপর উপস্থিত এমপিরা সবাই তা সমর্থন জানান। এরপর বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক নূর ই আলম চৌধুরী লিটন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য জানান, বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন প্রসঙ্গটি তোলেন। এ বিষয়ে তিনি এমপিদের মতামত চাইলে শুরুতে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বেশ কঠিন হবে। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ নেই। এ নির্বাচনে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হবে, নানা অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হবে। এসব বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের যেসব উন্নয়ন আছে সেসব ব্যাপকভাবে প্রচার চালানোর নির্দেশনা দেন তিনি।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের গণসংযোগ বৃদ্ধি, অন্তঃকলহ দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সরকারকে হটাতে আন্দোলনের নামে সারা দেশে সন্ত্রাসের যে আলামত পাওয়া যাচ্ছে, তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর