বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস যত বই তত বিভ্রান্তি

ফরিদ কবির

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস যত বই তত বিভ্রান্তি

গত কয়েক দশকে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে অসংখ্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এসব বই পড়তে গিয়ে লক্ষ্য করেছি, এগুলোতে আছে নানা ভুল তথ্য, নানা অসমর্থিত কাহিনি, নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য। পরিস্থিতি এমন- যত বই, তত বিভ্রান্তি!

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন অনেকেই। এগুলোতে এত এত ভুল তথ্য, এত এত অসমর্থিত ঘটনার উল্লেখ আছে যে, সেগুলো নিয়ে যে কোনো গবেষক-পাঠক ভবিষ্যতে নানা বিভ্রান্তিতে পড়বেন বলেই আশঙ্কা করি। যেমন- এক গবেষক লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু যখন ৭ মার্চের বক্তৃতা দেন তখন তাঁর গায়ে ছিল ১০৪ ডিগ্রি জ্বর! ৭ মার্চে তিনি কত মিনিট বক্তৃতা দিয়েছেন, তা নিয়েও আছে নানা ধরনের তথ্য। কেউ বলেছেন ১৭ মিনিট, কেউ ১৯, কেউ ২৩ মিনিট! আত্মসমর্পণের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সংখ্যা নিয়েও আছে অনেক তথ্য এবং তা ৩৪ হাজার থেকে ৯৪ হাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৯৫৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা দাবি পেশ করেন বলেও উল্লেখ আছে কোনো কোনো গবেষণামূলক বইয়ে। অথচ ইতিহাস বলছে, বিরোধী দলগুলোর আপত্তির কারণে তিনি সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা পেশ করার সুযোগ পাননি। আর, এ কারণে তিনি পরের দিন সম্মেলন থেকে ওয়াকআউট করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতের ঠিক কখন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আটক হন তা নিয়েও আছে নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য। সবাই জানেন, ১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ৭৮৭ দিন কারাবন্দি ছিলেন শেখ মুজিব। কিন্তু কোনো কোনো গবেষক লিখেছেন, ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি ভুখা মিছিল করায় তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৫০ সালে তিনি ছাড়া পান! কোনো কোনো গবেষক এমনও লিখেছেন, মিশন স্কুলেই শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা হয় কিশোর শেখ মুজিবের সঙ্গে। প্রকৃতপক্ষে মিশন স্কুলে কখনোই যাননি শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি গ্রন্থ এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সম্পাদিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অন দি ফাদার অব দি নেশন শেখ মুজিবুর রহমান’ প্রকাশের পর অনেক সঠিক তথ্য উন্মোচিত হলেও বিভিন্ন সময় প্রকাশিত এসব গ্রন্থে থাকা ভুল তথ্যগুলো সংশোধনের চেষ্টা দেখা যায়নি। এসব বিষয়ে কাউকে মুখ খুলতেও দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি গ্রন্থ- ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রকাশের পর বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক উন্মোচিত হয়েছে। তাতে আছে নানা অজানা তথ্যও। কিন্তু তিনটি গ্রন্থে যে জীবনপঞ্জি যুক্ত করা হয়েছে, তাতেই আছে নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য। এ তিনটি গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু যেসব তথ্য দিয়েছেন, গ্রন্থপঞ্জিতে একই বিষয়ে ভিন্ন তথ্য থাকায় বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, এই গ্রন্থপঞ্জি কার রচনা তারও কোনো উল্লেখ নেই। এ বইগুলোতে থাকা গ্রন্থপঞ্জির ভুলগুলো অবিলম্বে সংশোধন করা একান্ত দরকার।

ফরিদ কবির : কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও গবেষক। সম্পাদক, মুজিবপিডিয়া।

সর্বশেষ খবর