আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচন না করার পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না দলটি। এর আগে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের বহিষ্কার করেছে। এদিকে বিএনপি আসন্ন সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে না চাইলেও দলের অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি ভোটে বিজয়ী হতে পারলে, সিটি করপোরেশনে দলের মেয়র থাকলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলন-সংগ্রাম সহজ হবে। তাই আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হলে দল থেকে বহিষ্কার করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। নমনীয়তা দেখাবে দল।
জানা যায়, পাঁচ সিটিতে অন্তত ১২ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তোড়জোড় চালাচ্ছেন। এ ছাড়া কয়েক শতাধিক বিএনপি নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য লবিং করছেন। তবে দলের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় প্রকাশ্যে মাঠে নামছেন না তারা। কেউ কেউ বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে সরাসরি কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। এখন পর্যন্ত সাড়া পাননি। অনেকেই বলছেন, বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন। তারা আশা করছেন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্বতন্ত্রভাবে ভোট করলে দল আপত্তি করবে না। করবে না বহিষ্কার। জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে দল এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আমাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত রয়েছে আমরা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না।
জানা যায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়তে চাচ্ছেন অনেকেই। তবে দলের নির্দেশ অমান্য করে কেউ নির্বাচনে যাবেন না। এ ছাড়া আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, বর্তমানে দলীয় পদ পদবি নেই- এমন অনেকেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে এমন খবর পেয়েছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে তাদের নির্বাচনে না যাওয়ার মেসেজ দেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা নির্বাচনে গেলে তার দায়দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা সেখানে কোনোভাবেই সহায়তা করবে না। তৃণমূলের একটি অংশ সিটি নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে কাজ করছেন। আগামী ১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএনপি থেকে অন্তত তিনজন প্রার্থী হতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন। তাদের একজন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বিগত খুলনা সিটি নির্বাচনেও প্রার্থী ছিলেন। গত মঙ্গলবার মঞ্জু বলেছেন, বিএনপির সিদ্ধান্ত এখনো পাননি। বিএনপি বলছে তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো ভোটে অংশ নেবে না। সিটি নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি। বিএনপি নির্বাচনে গেলে প্রার্থী হবেন। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবেন না। সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির নেতা। তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী।নেতা-কর্মীরা বলছেন, এত দিন নির্বাচন বর্জন করে আসলেও জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস আগে পাঁচ সিটির নির্বাচন বিএনপির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বার্তা যাবে যে বিএনপি শেষ পর্যন্ত এই সরকারের অধীন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেবে। আবার এমনটাও ভাবছেন, সিটি করপোরেশনে দলের মেয়র থাকলে দাবি আদায়ে আন্দোলন গড়ে তোলা সহজ হবে। মাঠপর্যায়ের নেতাদের অনেকে বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাঁচ সিটি করপোরেশনের এ নির্বাচন দেশের পাঁচটি অঞ্চলের শহুরে মানুষের মনোভাব বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ সরকারের ওপর বিক্ষুব্ধ। তারা ফাঁকা মাঠে কাউকে গোল দিতে দেখতে চায় না। এ কারণে এ নির্বাচন নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে আগ্রহ আছে। তা ছাড়া মানুষের মধ্যে এ আলোচনাও আছে যে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা কেমন হয়, এটাও দেখার বিষয় আছে। তাই জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারের ভোট চুরি বা ভোট ডাকাতি হলে, তারও সর্বশেষ পরীক্ষাটা হওয়া দরকার। সবমিলিয়ে সিটি ভোটের বিষয়ে নমনীয় বিএনপির দায়িত্বশীলরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইভিএম বা ব্যালটের নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আমরা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আন্দোলন করছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আগ্রহী। বর্তমান সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিয়েছে। নির্বাচনের আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে।