দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি বা ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্টের (ইপিএ) বিষয়ে সম্মত হয়েছে জাপান। এ চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে যৌথ দরকষাকষি বা আলোচনা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা আসতে পারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে। সূত্র জানান, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে ২৫-২৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ সফরকালে সাত থেকে আটটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা আছে।
চার দিনের ওই সফরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি দেশটির সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা। আর এ সাক্ষাৎ পর্বেই সমঝোতা চুক্তিগুলোর পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে যৌথভাবে। এশিয়ার শিল্পোন্নত দেশ জাপানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে কয়েক বছর ধরেই। এরই মধ্যে দুই দেশের কর্মকর্তারা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুর জন্য প্রাথমিক কাজগুলো শেষ করেছেন। গত ডিসেম্বরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাপানের রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে চুক্তির বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ঘোষণা দেন। ফেব্রুয়ারিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা নাকাতানি জেন ঢাকা সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও চুক্তির বিষয়ে জাপানের অবস্থান জানাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। সর্বশেষ ১০ থেকে ১২ এপ্রিল চুক্তির বিষয়ে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে জাপানে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনার জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির আলোচনা শুরু করার জন্য দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে। এরপর চুক্তিটি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করবে চুক্তিতে কোন খাতগুলো অগ্রাধিকার পাবে, কোন খাত বাদ যাবে। আর চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছেন, প্রাথমিকভাবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হলেও বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনীতি সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয়ে অংশীদারি বাড়ানোর আগ্রহ আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান। এ কারণে এফটিএ’র বদলে অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি বা ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট করার বিষয়েই আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত চুক্তির ভিতরেই একে অন্যের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা বা মুক্ত বাণিজ্য কার্যকর করতে পারবে। পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অগ্রাধিকার খাতগুলোও উল্লেখ থাকবে যেখানে জাপান বা বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা একে অন্যের দেশে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার পাবেন। মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানান, জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। দেশটি বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি বাণিজ্য সম্ভাবনাময় এলাকা। পণ্য ছাড়াও সেবা ও বিনিয়োগ খাতেও জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া দেশটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন অংশীদার। গত পাঁচ দশকে দেশটি বাংলাদেশকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে জাপান বাংলাদেশে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষভাবে সাহায্য করছে। জাপান এখন বাংলাদেশের বড় রপ্তানি বাজারও। ইউক্রেন যুদ্ধের পরও যে কটি দেশে রপ্তানি বাড়ছে, তার মধ্যে জাপান উল্লেখযোগ্য। ২০২১-২২ অর্থবছরে জাপানে ১ হাজার ৩৫৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে দেশটি থেকে আমদানি করা হয়েছে ১ হাজার ৪১০ কোটি ডলারের পণ্য। ইপিবির তথ্যানুযায়ী আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে জাপানে ৪২ দশমিক ৩২ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগও বাড়ছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জাপানি বিনিয়োগ এসেছে।