শিরোনাম
বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

মৌলিক নিরাপত্তায় আপস নয় : পররাষ্ট্র সচিব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিদেশি মিশন ও কূটনীতিকদের মৌলিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ কোনো আপস করবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূত যারা আছেন, তাদের মৌলিক নিরাপত্তায় কখনোই আমরা কমপ্রোমাইজ করব না। এটুকু আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কারণ বিষয়টি প্রটোকলের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। পররাষ্ট্র সচিব জানান, সোমবার থেকে বাড়তি পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহারের বিষয়টি কার্যকর হয়ে গেছে। ঢাকায় থাকা বিদেশি কয়টি মিশনকে বাড়তি পুলিশ এসকর্ট দেওয়া হতো জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমার জানামতে, নিয়মিতভাবে চারটি দেশকে দেওয়া হতো। এ ছাড়া আরও দু-একটা দেশ যখন চাইত, তখন তাদের তা দেওয়া হতো। বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের বিষয়টি ওই দূতাবাসগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে নোটিফিকেশনের ওই রকম ব্যাপার ছিল না। যখন হলি আর্টিজানের ঘটনা ঘটল, তারপর...। এখানে যে রেকর্ডস আমরা দেখেছি, তাতে তাদের কাছ থেকে কোনো অনুরোধ আমরা খুঁজে পাইনি। তাদের দিক থেকে কোনো নোটিফিকেশনও করা হয়নি। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জঙ্গিবাদের উত্থানের যে আশঙ্কা ছিল, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে বা নিরাপত্তার বিবেচনায় তখন তাদের এটা (বাড়তি নিরাপত্তা) দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে যে মূলত ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজটাই (বাড়তি পুলিশ পাহারা) করত। সুতরাং আসল নিরাপত্তার যে বিষয়, তা অপরিবর্তিত আছে। নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো ঘাটতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। যে কারণগুলো বিচার করে দেখেছি, তখন যে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন ছিল, এখন আমরা ঢাকা শহরে কিংবা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বা যাই বলি না কেন, সেটা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে। সুতরাং সেটা একটা কারণ। দ্বিতীয়ত, নিজেদের সিস্টেমে (পুলিশের জনবল) বলা হচ্ছে, কীভাবে স্ট্রিম লাইন করা যায়। কারণ এখানে ঘাটতিও আছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ সময় পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, আপনারা সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কোনো না কোনো সময় তো করতে হতো। এ সময় নিয়ে আপনারা নানাভাবে জল্পনা করছেন। এটা এমনিতেই করা হতো। আরেকটা জিনিস বলতে পারি। রাষ্ট্র হিসেবে বিভিন্ন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতদের মৌলিক নিরাপত্তা দেওয়ার যে যে মৌলিক বাধ্যবাধকতা আছে, সেটা কখনোই আমরা আপস করব না, এ নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’ এ সময় মাসুদ বিন মোমেন রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থাও আমরা রেখেছি। স্পেশাল ব্যাটালিয়ন অব আনসার আছে। তাদের অনেক দিন ধরেই তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য সামান্য পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকতে পারে। বুধবার আমরা তাদের কাছ থেকে জেনে সকালে বা একসময় আনসারের ডিজির সঙ্গে বসে তাদের কী কী সুবিধা আছে, তা জানব।

সেগুলো আমরা তখন দূতাবাসগুলোকে জানিয়ে দেব। যারা তাদের চাইবে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগও আমরা করিয়ে দেব।’ বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের পতাকা ব্যবহারের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আসছে কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এটা সত্যি যে উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, আমি নিউইয়র্কে ছিলাম। সেখানে পতাকা ওড়ানোর ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে ইতালি ও জাপানে আমি যখন রাষ্ট্রদূত ছিলাম, আমি তো পতাকা উড়িয়েছি। সেখানে রাষ্ট্রীয় সব সভায় পতাকা ওড়ানোর বিধান আছে। আবার কিছুটা তো নিজের ওপরও থাকে বিষয়টা। কিন্তু আমি যদি বাজারে যাই, আমি যদি আমার সহকর্মীর বাসায় ব্যক্তিগত কারণে যাই, তখন তো পতাকা ওড়াব না। সেটা তো নিজেদের ডিসক্রিশনের (বিবেচনা) ওপর নির্ভর করে। কাজেই রাষ্ট্রদূতদের সেই বোধ আছে, তাদের কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়।’ভিয়েনা কনভেনশনের বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমি তো বললাম যে তাদের যে পরিমাণ নিরাপত্তাকর্মী দেওয়া হতো, তা তো কমেনি। শুধু যানজট এড়ানোই মূল বিষয় ছিল। দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতের বাসায় গানম্যানের (অস্ত্রধারী পুলিশ) বিষয়গুলো তো ইনট্যাক্ট (অটুট) রয়েছে। ভিয়েনা কনভেনশনে স্বাগতিক দেশ হিসেবে যে বিধান রয়েছে, আমরা সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মেনে চলব।

সর্বশেষ খবর