রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৩-২৪

প্রবৃদ্ধি অর্জনে ছয় চ্যালেঞ্জ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

প্রত্যাশিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে ছয় চালিকাশক্তির ওপর নির্ভর করছে সরকার। এই চালিকাশক্তিগুলো হচ্ছে- শক্তিশালী ভৌত অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন, তথ্যের অবাধ প্রবাহের নিশ্চয়তা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী দক্ষতা উন্নয়ন। বাজেট বক্তৃতার সঙ্গে সরবরাহ করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি  লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচনী বছরের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এত বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রবৃদ্ধি অর্জনে যেসব চালিকাশক্তির কথা বলা হয়েছে, তার কয়েকটিতে ঘোষিত বাজেটে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। শিক্ষা খাতে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দের হার কমেছে বলে বাজেট পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার কমিয়ে মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ গতকাল তার সংগঠনের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাজেটে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দেওয়া হলেও দেশীয় শিল্প সক্ষমতা ও টেকসই করার কোনো নির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের ক্ষুদ্র, কুটির ও ছোট শিল্প-কারখানার ৪৫ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব শিল্প-কারখানার বিষয়েও বাজেটে কিছু বলা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেট ও সরকারের আর্থিক নীতি বিবৃতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সামনের দিনগুলোতে বৈশ্বিক জিডিপি বাড়বে- এ ধরনের কিছু অনুমিতি এবং চলমান মেগাপ্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অর্থনীতিকে গতিশীল করবে- এমন ধারণার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইএমএফ-এর হিসাব অনুযায়ী সামনের বছরগুলোতে বৈশ্বিক জিডিপি বাড়বে, যা মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করবে। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার যে জোর দিচ্ছে- তা জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এরই মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, যা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলসংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প চালু হলে দেশের ভৌত অবকাঠামো খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রবৃদ্ধির দ্বিতীয় চালিকাশক্তি হিসেবে সরকার সংস্কার কার্যক্রমে জোর দিচ্ছে। এরই মধ্যে বাজেট ঘাটতি কমাতে রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ ভর্তুকি যৌক্তিককরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি ঋণে ব্যয় কমাতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। সূত্র জানায়, তৃতীয় চালিকা শক্তি তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য সরকার ডিজিটালাইজেশনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় প্রয়োজনীয় তথ্য সেবা পৌঁছে দিতে দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। বর্তমানে সারা দেশে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সঞ্চালনের লক্ষ্যে সরকার সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আইসিটিসহ বহিঃবাণিজ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পেতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশে অনেক হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব আইটি পার্কে সফটওয়্যার তৈরি ও বিদেশে রপ্তানির সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে পূর্বের কৃচ্ছ্রতার নীতি থেকে বের হয়ে এসে মেগাপ্রকল্পসহ প্রবৃদ্ধি সঞ্চারক চলমান ও নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করব। একই সঙ্গে বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি, যেমন- নিষ্কণ্টক জমি, উন্নত অবকাঠামো, নিরবচ্ছিন্ন ইউটিলিটি, আর্থিক প্রণোদনা ও সহজ ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধাসহ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ সুবিধা অব্যাহত রাখা হবে।

 

সর্বশেষ খবর