শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

জ্বালানির ধারাবাহিক উন্নয়নে নজর দেওয়া হয়নি

---- অরুণ কর্মকার

জ্বালানির ধারাবাহিক উন্নয়নে নজর দেওয়া হয়নি

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অরুণ কর্মকার বলেছেন, বিদ্যুতের মতো জ্বালানির ধারাবাহিক উন্নয়নে নজর দেওয়া হয়নি। গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। অরুণ কর্মকার বলেন, এখন যদি প্রকৃতি সহযোগিতা করে এবং ঝড়বৃষ্টি ভালোভাবে আসে তাহলে আবহাওয়া ঠান্ডা হবে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কমবে। তখন একটি স্বস্তির জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারব। অরুণ কর্মকার বলেন, বিদ্যুতের এ সংকট তৈরির পেছনে দেশি ও আন্তর্জাতিক দুই ধরনের প্রেক্ষাপট আছে। সরকার মূলত সংকট তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের কথা বলে। এরই অংশ হিসেবে বলা হয় যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ডলার সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণে আমরা জ্বালানি আমদানি করতে পারছি না। এ বিষয়টি নিয়ে সরকার যা বলে তা সত্যি বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে উল্টো লাভবান হয়েছে। আমরা রাশিয়া থেকে সার, গম কিনতে পারি। কিন্তু রাশিয়া কম দামে যখন তেল দিতে চায় তখন তা আমরা কিনতে পারি না কেন! এখানে সরকারের একটি কূটনৈতিক ব্যর্থতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।

এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, সরকার ২০১০-১১ সালের দিকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল। বিদেশি কোম্পানি শেভরন সে সময় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়েছিল। তখন দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বেড়ে হয় ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর স্বল্প পরিমাণ গ্যাস পাওয়া গেলেও সার্বিকভাবে গ্যাসের উৎপাদন এতে বৃদ্ধি পায়নি। কারণ আমাদের গ্যাসকূপগুলো থেকে দিন দিন উৎপাদন কমে আসছে। এখন দেশের কূপগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে নেমে এসেছে ২ হাজার ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে। ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন কমে গেছে। অরুণ কর্মকার বলেন, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পনা করে উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেভাবে পরিকল্পনা করে যদি প্রতি বছর দুটি করে গ্যাসকূপ খনন করা হতো তাহলে এখন আমাদের গ্যাস উৎপাদনের হার আরও বেশি থাকত। তাহলে বাড়তি ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটসহ আগের ২ হাজার ১৫০ মিলিয়ে মোট ৩১ মিলিয়ন ঘনফুটের ওপরে গ্যাস থাকত। এর সঙ্গে আমদানিকৃত এলএনজি যুক্ত হয়ে তা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ছাড়িয়ে যেত। আর এ-পরিমাণ গ্যাসে আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় চালাতে পারি। সে ক্ষেত্রে অবশিষ্ট তেল ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পূর্ণ উৎপাদন না করলেও লোডশেডিংয়ের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারত না। কয়লা ও তেলে উৎপাদন ব্যাহত হলেও শুধু সব গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। এর পাশাপাশি আমাদের শিল্পকারখানায় যে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু বর্তমানে আছে মাত্র ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এখন সরকার যদি এ ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুতের মতো ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পনা করে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করে তাহলে পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাবে।

 সে ক্ষেত্রে এ সংকটময় পরিস্থিতিও আমরা ভালোভাবে এড়াতে পারব। অরুণ কর্মকার আরও বলেন, পায়রা থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে। অবশিষ্ট লোডশেডিং তাহলে কেন হচ্ছে? এটি হচ্ছে গ্যাস ও তেলের সরবরাহ কম থাকার কারণে। সরকার এ দুই জ্বালানির জন্য টাকা দিতে পারছে না। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় এখন যদি বিনামূল্যেও সরকার এলএনজি কিনতে চায় তা হলেও অবকাঠামোর অভাবে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি আমদানি করা যাবে না। আর এ বিঘ্নগুলো সৃষ্টি হয়েছে সরকারের নীতিগত ভুলের কারণে।

সর্বশেষ খবর