হিন্দু রাষ্ট্রের পথ প্রশস্ত করতেই নতুন করে ভারতে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ (ইউসিসি বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি) আনা হচ্ছে বলে মনে করেন নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ একটি কঠিন এবং পুরনো বিষয়। এটা নিয়ে আমরা হাজার বছর ধরে আছি, এটা নতুন কিছু নয়। আমাদের মধ্যে মতভেদ আছে। ধর্মের পার্থক্য আছে, নিয়মনীতির পার্থক্য আছে। আমাদের এ বিভেদ দূর করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পত্রিকায় প্রতিবেদন দেখলাম, সেখানে বলা হয়েছে ইউনিফর্ম সিভিল কোড কার্যকরে আর বিলম্ব করা উচিত নয়। কোথা থেকে এমন আজেবাজে ধারণা এসেছে, আমি জানি না।’ সম্প্রতি ‘এক দেশ এক আইন’ অর্থাৎ ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) চালু করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতোমধ্যে ইউসিসি নিয়ে মন্ত্রীদের একটি গ্রুপও গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে মোট চারজন মন্ত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ গ্রুপের সভাপতিত্ব করবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু।
হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে ইউসিসির যোগসূত্র আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘হিন্দু রাষ্ট্রের পথ প্রশস্ত করার সঙ্গে এর নিশ্চয়ই কোনো যোগ আছে। হিন্দু রাষ্ট্র গঠন হলে রাষ্ট্রের কিছু দিকে যেমন নতুন পথ খুলে যেতে পারে, আবার কিছু পথ অবশ্যই বন্ধ হবে। কিন্তু হিন্দু রাষ্ট্র গঠনই একমাত্র উপায় নয়। হিন্দুধর্মকে অপব্যবহার করা হচ্ছে।’
বুধবার পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী’ বাড়িতে বসে এসব মন্তব্য করেন অমর্ত্য সেন। এদিন তাঁর বাসায় গিয়ে অধ্যাপক সেনের সঙ্গে দেখা করেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার নিয়ে গত জুনের শেষের দিকে মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিএনএনের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বলতে শোনা যায় ‘ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করা না হলে দেশটি ভেঙে যেতে পারে।’ সেই মন্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘শ্রেণি, ধর্ম এবং লিঙ্গ ভেদে দেশে অনেক পার্থক্য রয়েছে, যেগুলো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। আমি খুশি যে ওবামা এটা তুলে ধরেছেন। তবে আমাদের মধ্যেও অনেকে আছেন যারা সহজেই এগুলো চিহ্নিত করতে পারতেন।’
তবে গোটা দেশে ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) চালুর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যত হলেও এর বিরোধিতার কথা জানিয়েছে মুসলিম ল বোর্ড। বুধবার বিষয়টি নিয়ে মুসলিম ল বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও করেন।