ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, বরিশাল, চাঁদপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত বাড়ছে। সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত এর মধ্যেই ৫৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেয়েছেন ২৭৩ জন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭১১ জন, মারা গেছেন ১২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কিছুটা বাড়তি থাকলেও রাজধানীতে ডেঙ্গু অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে। এমনকি রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় সবচেয়ে ব্যস্ততম হাসপাতালগুলোতেও এখন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা ফাঁকা আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ঢাকায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ৪৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, হাসপাতালটিতে রোগীদের জন্য মোট শয্যা রয়েছে ৬০০টি। রাজধানীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি (৩৪৮ জন) রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ছাড়া অন্যান্য প্রায় সবগুলো হাসপাতালেই শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেগুলোতে অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থাও রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি এলাকায় এখনো ডেঙ্গু ঊর্ধ্বমুখী। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যাত্রাবাড়ী, মুগদা, উত্তরা, জুরাইন, মিরপুর। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী যাত্রাবাড়ী এলাকায়। বিভাগীয় পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, আক্রান্তের দিক থেকে ঢাকার পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান। ডেঙ্গুতে মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীগুলোর মধ্যে যারা মারা গেছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই হাসপাতালে ভর্তির ১-২ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম, যাদের প্লাজমা লিকেজ হয়েছে। এ ছাড়া শক সিন্ড্রোমের কারণে তাদের দেহের অন্যান্য অর্গানও আক্রান্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭১১ জন, মারা গেছেন ১২ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ হাজার ১৩০ জন এবং ঢাকার বাইরের বাসিন্দা ১ হাজার ৫৮১ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ১২৭ জন, মারা গেছেন ২৭৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯ হাজার ৩২৫ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৮৬৯ জন। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ৪১৩ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ৪৫৬ জন।
আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক র্যালি ও আলোচনা সভা করেছে ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের সামনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আজিজ আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি ব্যক্তি পর্যায়ের সচেতনতা। আর এই সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণারও প্রয়োজন আছে। তাছাড়া ডেঙ্গু এখন রূপ পরিবর্তন করেছে। তাই কীভাবে এই রূপকে প্রতিরোধ করা যায় সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি এবং প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি গবেষণার আহ্বান জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু পরীক্ষা হয়েছে ১০৫টা। পরীক্ষায় তিনজনের ডেঙ্গু পজিটিভ এসেছে। আগে চারজনের পজিটিভ হয়েছিল। তবে তারা সবাই রাজশাহীর বাইরে থেকে ডেঙ্গু সংক্রমিত হয়েছেন। মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজে সচেতন থাকতে হবে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ভয়ের কিছু নেই। এই সেন্টারে ডেঙ্গুজ্বরে সার্বিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।