বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গতকাল গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বাড়িতে। পুলিশ জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ব্যাপক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাদের ভাঙচুর অগ্নিসংযোগে কাকরাইল, বিজয়নগর, নয়াপল্টন, রাজারবাগ, সার্কিট হাউজ রোড, আরামবাগসহ বিস্তীর্ণ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিজয়নগরে বিএনপি কর্মীরা একজন পুলিশ সদস্যকে একা পেয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। কাকরাইলে তারা হামলা চালায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। আগুন ধরিয়ে দেয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে। তাদের হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ সাংবাদিক। এসব ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় ২৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শাহবাগ থানায় ১টি, শাহজাহানপুর থানায় ৬টি, মতিঝিলে ১টি, পল্টনে ১টি, খিলগাঁওয়ে ১টি, রামপুরায় ১টি, মুগদায় ১টি, ডেমরায় ১টি, ওয়ারীতে ১টি, যাত্রাবাড়ীতে ১টি, হাতিরঝিলে ২টি, মিরপুরে ১টি, পল্লবীতে ১টি, কাফরুলে ১টি, দারুসসালামে ১টি, শাহআলীতে ১টি, রূপনগরে ১টি, ভাসানটেকে ১টি, ভাটারায় ২টি, বাড্ডায় ১টি, উত্তরা পূর্বে ১টি এবং রমনায় ১টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে সহস্রাধিক ব্যক্তিকে। আরও মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। পুলিশ বলেছে, গত দুই দিনে পুলিশ ১৪৮০ পিকেটারকে গ্রেফতার করেছে।
ফখরুল কারাগারে : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রাত ৮টায় আদালতে পাঠায়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) মিন্টো রোডের কার্যালয়ে তাকে নিয়ে যায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডিবির সদস্যরা মির্জা ফখরুলের বাসায় গিয়ে তাকে আটক করেন। তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের সদস্যরা গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বাসার সবার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ (চিত্র) ও হার্ডডিস্ক নিয়ে চলে যান। এর ঠিক ১০ মিনিট পর আবার ফিরে এসে মির্জা ফখরুলকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। রাহাত আরা বেগম বলেছেন, মির্জা ফখরুল প্রচ- অসুস্থ, তার চিকিৎসা চলছিল। ৭৫ বছর বয়স্ক মানুষ, তাকে এভাবে নিয়ে যাওয়া তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তিনি আশা করছেন, জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে তা করে যেন ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।
আব্বাস-খসরুর বাড়িতে তল্লাশি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। বিএনপি জানিয়েছে, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের বাসায় তল্লাশি ও অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল ৯টার দিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বনানীর বাসায় দুটি ফ্ল্যাটে পুলিশ তল্লাশি চালায়। তবে সে সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরু সাংবাদিকদের বলেন, সকালে ডিবি সদস্যরা এসে তার বাবাকে খুঁজতে তল্লাশি চালান। তারা বাসার প্রতিটি কক্ষ খুঁজে দেখেন। ডিবি সদস্যরা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্ট এবং তার স্ত্রীর মুঠোফোন নিয়ে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট পর সেগুলো ফেরত দেন। ইসরাফিল আরও বলেন, তার বাবা কোথায় আছেন, তা ডিবি সদস্যরা জানতে চেয়েছেন। পুলিশ তাদের জানিয়েছে, দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ইশরাক হোসেনের গুলশানের বাসায় ডিবি অভিযান ও তল্লাশি চালিয়েছে। তবে তাকে না পেয়ে তার ছোট ভাই ইশফাক হোসেন ও গাড়িচালক রাজীবকে নিয়ে গেছেন ডিবি সদস্যরা। পরে ইশফাক হোসেনকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ হত্যায় গ্রেফতার : বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল সকালে তাদের ঢাকা ও গাইবান্ধা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রাজধানীতে শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য মো. আমিরুল ইসলাম পারভেজ (৩২) নিহত হন। এ ঘটনায় আজ সকালে পল্টন থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এরপর দুজনকে গ্রেফতারের কথা জানানো হলো। পুলিশ জানায়, গ্রেফতার দুজন হলেন শামীম রেজা ও মো. সুলতান। শামীম গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার যুবদলের আহ্বায়ক। তাকে সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। সুলতানকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঢাকার ডেমরা থেকে। নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামের জানাজা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে সেখানে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেফতার দুজন সরাসরি হত্যায় অংশ নেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলার সময় ফকিরাপুলের বক্সকালভার্ট রোড এলাকায় আমিরুল মাথায় আঘাত পেয়ে রাস্তায় পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে অন্তত ছয়টি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ান দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সংঘর্ষে পুলিশের সদস্য আমিরুল ছাড়াও যুবদলের ওয়ার্ড পর্যায়ের এক নেতা নিহত হয়েছেন। তার নাম শামীম মিয়া। তিনি রাজধানীর মুগদা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।