সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

সহসাই একমঞ্চে উঠতে পারে বিএনপি-জামায়াত

শফিউল আলম দোলন

সহসাই একমঞ্চে উঠতে পারে বিএনপি-জামায়াত

দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর আবারও বিএনপি-জামায়াত এক জোট হচ্ছে। সহসাই একমঞ্চে উঠতে পারে। উভয় পক্ষের টানা কয়েক মাসের ব্যাপক প্রচেষ্টা ও তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত বিষয়টি বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের তিনজন সদস্য এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। অন্যদিকে জামায়াতের আমিরসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখন ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের তাগিদ দিতে শুরু করেছেন। তবে প্রগতিশীল বামঘেঁষা কয়েকটি ক্ষুদ্র সমমনা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা এতে দ্বিমত পোষণ করে এটাকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছেন।

বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতা এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। যুগপৎ আন্দোলনের সমমনা জোট ও দলগুলোর সঙ্গেও এ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছে বিএনপি। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই জামায়াতকে যুক্ত করে সমমনা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহৎ শক্তিশালী মঞ্চ গঠনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রগতিশীল বামঘেঁষা কয়েকটি ক্ষুদ্র সমমনা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা এতে দ্বিমত পোষণ করে এটাকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ‘দেশ ও জাতির কঠিন সময়ে’ রাজপথে দুই একদিন শো-ডাউন করা ছাড়া দলটির আর কোনো তৎপরতা ছিল না। কাজেই এদের কখনো বিশ্বাস করা যায় না। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  জামায়াতে ইসলামীর একাধিক সূত্র জানায়, দলটি বিএনপির সঙ্গে একমঞ্চে আন্দোলন করার বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত। সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একাধিক বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়। এসব বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে তাগিদ দেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। জানা গেছে, সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে কার্যত ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি এবং সমমনা দল ও জোট আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে নতুন ছক তৈরি করছে। এ লক্ষ্যে গত ১২ মে থেকে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীকে আগামী দিনের আন্দোলনে একই মঞ্চে আনার জন্য মত দেন সমমনা দলের অধিকাংশ নেতা। বিএনপির পক্ষ থেকেও বিষয়টিকে এবার ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কেউ কেউ বিগত আন্দোলনে জামায়াতকে সরাসরি সম্পৃক্ত না করাকে আন্দোলনে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ বলেও উল্লেখ করেন। সমমনা ১২ দলীয় জোট, এলডিপিসহ বেশ কয়েকটি দলের বক্তব্য হলো- অতীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এক সময় জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করেছিল। তাহলে জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করলে দোষ কোথায়? তাই আন্দোলনের নতুন কর্মপরিকল্পনায় জামায়াতকে যুক্ত করার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন তারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের হাত থেকে দেশ ও জনগণকে মুক্ত করতে- শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, চলমান আন্দোলনে যারাই যুক্ত হবেন- তাদেরই আমরা স্বাগত জানাই। তাছাড়া জামায়াত তো যুগপৎ আন্দোলনে ইতোমধ্যেই যুক্ত আছেই। তারাও সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা তো দেখেছি গত ১৫-২০ বছরে কী অর্জিত হয়েছে। সুতরাং এখন যা প্রয়োজন, সেই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তটাই নেওয়া উচিত। হাল চাষের জন্য ন্যূনতম পরিমাণের হলেও গরুর প্রয়োজন আছে। কারণ ছাগল দিয়ে কখনো হাল-চাষ হয় না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন নির্বাচন দাবিসহ সরকার পতনের নতুন আন্দোলনে বিএনপিসহ সব বিরোধী দল মিলে আমরা একটি ব্যানারে একমঞ্চে মিলিত হব। সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমেই এ সরকারের পতন নিশ্চিত করা হবে। গণতন্ত্র মঞ্চ আগে জামায়াত ইস্যুতে সরাসরি বিরোধিতা করলেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে নীরব ভূমিকা পালন করে। এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইসলামী দলগুলো মাঝে মধ্যে সরব হলেও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজপথে এখনো কার্যকরভাবে সক্রিয় নয়। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ যেন শপথ করে বসে আছেন- ‘জামায়াত থাকলে হবে না’। ব্যাপারটা বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মোটেও যায় না। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জামায়াত সঙ্গী হলে আমিতো দোষের কিছুই দেখছি না। এ প্রসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, চলমান আন্দোলনে অচিরেই আরও কিছু দল যোগ দেবে। তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ আরও বেশ কিছু ইসলামী দল আছে। সবার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এখন নতুন করে একটি শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা যায়, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিগত আন্দোলনে কিছু সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী, যা আমরা বিএনপিকে ইতোমধ্যে বলেছি। যেমন অসহযোগ আন্দোলন ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। আবার জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এক প্ল্যাটফরমে যাওয়ার উদ্যোগ হলো হতাশার ফল। এ রকম অনেক সিদ্ধান্ত ছিল হঠকারী। ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এ প্রসঙ্গে কোনো রাখডাক না রেখেই বলেন, বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এক মঞ্চ তৈরি করতে চাইলে আমরা থাকব না। তবে, আমাদের সরকারবিরোধী আন্দোলন চলবে।

সর্বশেষ খবর