ইরানে দ্বিতীয় দফার ভোটে কট্টরপন্থি সাঈদ জালিলিকে হারিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থি মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। সূত্র : রয়টার্স, পার্স টুডে। মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রবীণ সংসদ সদস্য। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাঈদ জালিলি ছিলেন সাবেক প্রধান পরমাণু আলোচক। সর্বসাধারণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৩ ভোট। অন্যদিকে সাঈদ জালিলির প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৯। খবরে বলা হয়, পেজেশকিয়ানকে ভোট দেওয়া অধিকাংশ মানুষই শহুরে মধ্যবিত্ত এবং তরুণ বলে মনে করা হয়। তারা ইসলামপন্থি গোঁড়ামির কারণে ইরানে বহু বছর ধরে চলমান সামাজিক নিরাপত্তা লঙ্ঘনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এই কট্টরপন্থি সরকারব্যবস্থা দেশটি জনসাধারণের ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখে। মাসুদ পেজেশকিয়ান একজন স্বল্পপরিচিত মধ্যপন্থি রাজনীতিবিদ হিসেবে বেশি পরিচিত। তিনি ছিলেন ইরানের সংস্কারবাদী আইনপ্রণেতা। হৃদরোগবিষয়ক শল্যবিদ থেকে এখন তিনিই দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তার এ জয় সামাজিক স্বাধীনতা ও আরও বাস্তবধর্মী পররাষ্ট্রনীতি-প্রত্যাশী ইরানের কোটি কোটি মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। প্রসঙ্গত, গত মে মাসে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। এ ঘটনার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থি শিবির এ নির্বাচনে পেজেশকিয়ানকে সমর্থন দিয়েছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ খামেনি-সমর্থিত সাবেক প্রেসিডেন্ট রাইসির সঙ্গে পেজেশকিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক রয়েছে। নারীদের পোশাকের স্বাধীনতায় লাগাম টানতে কড়াকড়িভাবে আইনের প্রয়োগ করেছিলেন রাইসি। পরমাণু চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইরানের ঝিমিয়ে পড়া আলোচনায় গতি আনার বিষয়েও কঠোর অবস্থান নেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানে একটি বাস্তবসম্মত পররাষ্ট্রনীতি প্রচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ৬৯ বছর বয়সী সাবেক এই কার্ডিয়াক সার্জন। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির পুনর্নবীকরণ নিয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ করার আহ্বান জানিয়েছেন পেজেশকিয়ান।
এই চুক্তির আওতায় ইরানের ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করার বিনিময়ে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে সম্মত হয়েছিল তেহরান। একই সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে সামাজিক উদারনীতি এবং রাজনৈতিক বহুত্ববাদের সম্ভাবনাগুলোকে উন্নত করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। আরেক খবরে বলা হয়, জয়ী হওয়ায় পেজেশকিয়ানকে বিশ্বশক্তিগুলোর স্বাগত জানানোর কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে। তেহরানের দ্রুত বিকাশমান পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের তীব্র টানাপোড়েনে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারেন তিনি- এমনটাই ধারণা বিশ্লেষকদের।