বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে

--- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল বলেন, আমি একটি সত্যিকারের অর্থবহ, গণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে এমন বাংলাদেশ চাই। তিনি আর বলেন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি হয়, নারীর সমান অধিকার পারিবারিক আইনেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়, নাগরিকরা ক্ষমতায়িত হয় এবং সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হয় এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যাশা এতই বেড়ে গেছে যে, এটি তাদের প্রতি অবিচার করা হবে যদি যে পরিমাণ প্রত্যাশা আমার মনে আছে শুধু সে কথাগুলো আমি বলি। কিন্তু আমি একটু সতর্ক থেকেই বলছি, তাদের মধ্যে বিভক্তি, মতবিরোধ হতে পারে, কিন্তু তারা যেন জনগণের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে, দেশের গণতন্ত্রায়ণের প্রশ্নে, সুশাসনের প্রশ্নে কোনো বিভেদ সৃষ্টি না করে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- যতক্ষণ পর্যন্ত সত্যিকার ও বড় ধরনের রিফর্মগুলো আমরা আনতে না পারি ততক্ষণ পর্যন্ত যেন শিক্ষার্থীরা ময়দান ছেড়ে না যায়। অর্থাৎ আলোচনার যে জায়গাটি শিক্ষার্থীরা সৃষ্টি করেছে সেটি ছেড়ে যেন তারা না যায়। তারা যেন কোনো লোভ, লালসা এবং উচ্চাকাক্সক্ষার মুখোমুখি না হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে- তারা যেন নির্বাচন করে আবার লঙ্কায় গিয়ে রাবণ না হয়। এজন্য তড়িঘড়ি নির্বাচনের জন্য চাপ প্রয়োগ না করে জনগণের মনের ভাষা বুঝে যে জায়গাগুলোতে সংস্কার করা দরকার সেই সংস্কার প্রস্তাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে এক হয়। সেই সংস্কারগুলো হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো যেন নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়। আমরা আওয়ামী লীগের বিদায়ের পর দেশে যে চিত্র দেখতে পারছি এতে ধারণা করছি আমাদের একই ধাঁচের রাজনীতিতে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এটি আর আমরা কোনোভাবেই হতে দেব না। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের এই পালস ও প্রত্যাশা যেন উপলব্ধি করে এবং তাদের রাজনৈতিক ধরন ও কাঠামো বদলায়। রাজনীতিবিদদের কাছে পরিবারতন্ত্র থেকেও আমাদের মুক্তি দেওয়ার একটি দাবি আমরা জানাচ্ছি। এই আইনজীবী বলেন, আমাদের এখন ধৈর্র্য ধরতে হবে। একটি গণ অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের পর এ ধরনের বিশৃঙ্খলা অসম্ভব নয়। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, আমরা এবার একই সঙ্গে সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ফলে পুলিশ আমাদের যে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারত তা দিতে পারেনি। সেই শান্তি ও নিরাপত্তা অবশ্য পুলিশ আমাদের কখনোই দিতে পারেনি। এবার যে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হলো সেটা অন্তত পুলিশ ঠেকাতে পারত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এবার পুলিশও আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কা বিপ্লবের সঙ্গে এই বিপ্লবের এটাই হচ্ছে আমাদের বড় তফাত। জনগণকে তার দাবির প্রশ্নে, তার প্রত্যাশার প্রশ্নে অনড় থাকতে হবে। জনগণের শুধু ছাত্রদের ওপর দায় ছেড়ে গিয়ে চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। তাদেরও সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করতে হবে।

সর্বশেষ খবর