সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ, সরকার ঘোষিত ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ৪২ দিন পর আজ থেকে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রমে ফিরছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রথম দিনেই শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ১ নম্বরে রয়েছে বিচারপতিদের অপসারণের বিধান সংক্রান্ত সংবিধানের বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ চেয়ে বিএনপির করা আবেদনটিও আজ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে উপস্থাপন করা হতে পারে। ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ দুই সাংবিধানিক বিষয়ে করা রিভিউ আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে আজ সবার দৃষ্টি থাকবে উচ্চ আদালতের দিকে। এ ছাড়া শেখ হাসিনা পরিবারের প্লট জালিয়াতি, বেক্সিমকো গ্রুপে রিসিভার নিয়োগ সংক্রান্ত রিট আবেদনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হাই কোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে এসব মামলার দিন ঠিক করেছিলেন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চগুলো। দীর্ঘ ছুটি শেষে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে ৫৪টি হাই কোর্ট বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। হাই কোর্ট বিভাগের ১০১ জন বিচারপতির মধ্যে ৮৩ জনকে দিয়ে ২৯টি ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বাকি বিচারপতিদের মধ্যে দুজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদের দলবাজি, দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে বিচারকাজ থেকে বিরত রেখেছেন প্রধান বিচারপতি। এদের মধ্যে তিন বিচারপতি পাঁচ বছর ধরে বিচার কাজের বাইরে। অন্যদিকে আগামীকাল থেকে আপিল বিভাগের ছয়জন বিচারপতি দুটি বেঞ্চে বসবেন। এর মধ্যে একটি বেঞ্চের নেতৃত্ব দেবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। অন্যটির নেতৃত্বে থাকবেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম।
ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ আবেদন : বিচারপতিদের অপসারণের বিধান সংক্রান্ত সংবিধানের বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগের শুনানির কার্যতালিকায় এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আপিল বিভাগের আজ রবিবারের কার্যতালিকায় দেখা যায়, ৭৫১/২০১৭ সিভিল রিভিউ পিটিশনটি ১ নম্বর আইটেম হিসেবে শুনানির জন্য রয়েছে। গত ১৫ আগস্ট আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৩৭ নম্বর ক্রমিকে থাকা আইটেমটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগে মেনশন করেন রিটকারী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওই সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, এটার বিষয়ে ইনস্ট্রাকশন দরকার। তাই সময় চাচ্ছি। এরপর সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘ওয়ান উইক আফটার ভ্যাকেশন’ এটি শুনানির জন্য আসবে। তবে ‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারক’ উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাই কোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে হাই কোর্টের ১২ বিচারপতিকে কোর্ট পরিচালনার জন্য বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না বলে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত বুধবার বিকালে জানান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞা। সে সময় তিনি আরও বলেন, বিচারপতিদের অপসারণের কোনো বিধান এখন না থাকায় বিচারপতিদের অপসারণের বিধান-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের রিভিউটি আগামী ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগে ১ নম্বর আইটেমে শুনানির জন্য থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাই কোর্টে একটি রিট করেন। সে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাই কোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
হাই কোর্টের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন। বহুল আলোচিত ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে দেশের গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রিভিউ আবেদন : তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে বিএনপির করা রিভিউ আবেদনও আজ সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেন, এ রিভিউ আবেদন রবিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, ৪১ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।