একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন সিলেট বিভাগের আট সংসদ সদস্য। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়ন ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দলীয় নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আত্মগোপনে চলে যান প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও। ইতোমধ্যে আটজনের মধ্যে তিন মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি পাঁচজনের অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই দলের নেতা-কর্মীদের। আত্মগোপনে থাকা মন্ত্রীদের বেশির ভাগ দলীয় নেতা-কর্মী, এমনকি আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন। সূত্র জানিয়েছে, আত্মগোপনে থাকা পাঁচ মন্ত্রীর কেউ কেউ গোপনে দেশ ছেড়েছেন।
বাকিরা দেশেই আছেন গা ঢাকা দিয়ে। গত দুই মেয়াদের সরকারে মন্ত্রিসভায় যারা ঠাঁই পেয়েছিলেন তারা হলেন- সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, একই মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ইমরান আহমদ, এম এ মান্নান ও অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ইমরান এখনো জেলে থাকলেও জামিনে বের হয়েছেন মান্নান ও মাহবুব।
ড. এ কে আবদুল মোমেন দেশে না যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন, এ ব্যাপারে দলীয় নেতা-কর্মী কিংবা সিলেটে তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে কোনো তথ্য নেই। সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী সরকার পতনের কয়েকদিন আগেও ছিলেন তার নির্বাচনি এলাকায়। সিলেট-২ আসনভুক্ত বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেন। ২ আগস্ট তিনি সিলেট থেকে ঢাকা যান। সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর তিনি ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। প্রায় মাসখানেক আত্মগোপনে থাকার পর তিনি সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত পাড়ি জমান। ছিলেন ভারতের শিলংয়ে। পরে দিল্লি হয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ কয়েকটি মামলা হয়েছে। তার অবৈধ সম্পদের তদন্তে নেমেছে দুদক। সিলেটে নাহিদের ঘনিষ্ঠজন যারা ছিলেন তাদের কাছেও নেই নাহিদের খবর। তবে বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর ধারণা নাহিদ দেশেই আছেন। সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের বিরুদ্ধে হত্যা এবং অর্থ পাচারের কয়েকটি মামলা রয়েছে। গত ২০ অক্টোবার বনানী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মন্ত্রী থাকাকালে জনবল রপ্তানির নামে ২৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০ দিন কারাভোগের পর ৯ অক্টোবর তিনি জামিনে মুক্ত হন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সুনামগঞ্জ থেকে প্রথমে সিলেট কারাগারে ও পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। ২২ অক্টোবর তিনি জামিনে মুক্ত হন। ৫ আগস্টের পর থেকে নিরুদ্দেশ রয়েছেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দীন। সরকার পতনের পর পর দুই মন্ত্রীই নিজেদের নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে কয়েক দিন পরই তারা এলাকা ছাড়েন। বর্তমানে তাদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে।