আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সুযোগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী সংস্কার কার্যক্রম শুরু হলেই নতুন দল নিবন্ধন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিয়ে সংস্কার কমিশনের কাছে অনেক প্রস্তাব এসেছে। অনেকেই দলের নিবন্ধন কার্যক্রম সহজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশেষ করে বিগত সময়ের মতো কিংস পার্টি যাতে নিবন্ধন তালিকায় না থাকে সেই বিষয়েও প্রস্তাবনা এসেছে। আবার অনেক রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের বাতিলও চেয়েছে। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দলীয় কর্মীদের সংখ্যা; তালিকা থাকাটাও জরুরি বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন কার্যক্রমে কী ধরনের সংস্কার আসছে-সে ব্যাপারে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নিবন্ধনের জন্য আরপিওতে কিছু বিধিবিধান রয়েছে। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করছি। নিবন্ধনের বিধিবিধান যাতে রাজনৈতিক দলের জন্য বোঝা না হয় সেই বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করছি। আমরা যে ধরনের রাষ্ট্র চাই; দল নিবন্ধনের কার্যক্রম যেন সেই রাষ্ট্রের জন্য সহায়ক হয় সেই বিষয় পর্যালোচনা চলছে। আগামী বছর নতুন দল নিবন্ধন নিয়ে কাজ শুরু করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তবে ভোটের অন্তত ছয় মাস আগে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা।
নিবন্ধন পাওয়ার আগেই দলগুলো বিভিন্ন জোটে যাওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন দলগুলো বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনাও করছে। ২০২২ সালের মে মাসে নতুন দলের নিবন্ধন আবেদন চেয়েছিল ইসি। তিন মাসের সময় দিলেও তাতে সাড়া না পেয়ে অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। নভেম্বরে প্রাথমিক পর্যালোচনা শুরু করে এবং এপ্রিল মাসে মাঠপর্যায়ে তদন্তে যায় ইসি। দুই মাস তদন্ত চলে। ওই সময় নিবন্ধন পেতে শতাধিক দল আবেদন করে। প্রাথমিক বাছাই ও দলিলাদি পর্যালোচনার পর ৮১টি দলের আবেদন বাদ পড়ে। মাঠপর্যায়ে তদন্তের জন্য যায় ১২টি দলের নাম। এক ডজন দলের তদন্ত প্রতিবেদন শেষে ২০২৩ সালের আগস্টে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন দলটির প্রতীক হচ্ছে ‘মাথাল’। গত সেপ্টেম্বরে ইসি এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নম্বর- ১৩৮০৫২০১৮ এর বিগত ১১ এপ্রিল, ২০১৯ তারিখের প্রদত্ত রায় ও আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর বিধান অনুযায়ী প্রধান কার্যালয় ৩০৬-৩০৭ রোজভিউ প্লাজা, ১৮৫ বীরউত্তম সিআর দত্ত রোড, হাতিরপুল, ঢাকা ১২০৫-এ অবস্থিত গণসংহতি আন্দোলন-কে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করিয়াছে। উক্ত দলের জন্য ‘মাথাল’ প্রতীক সংরক্ষণ করা হইয়াছে এবং উহার নিবন্ধন নম্বর-০৫৩। এ নিয়ে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৮টি।
নবম সংসদ নির্বাচনে দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর পর ৩৯টি দল নিবন্ধন পায়। এরপর দশম সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি দলের নিবন্ধন দেওয়া হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো দল নিবন্ধন পায়নি। দ্বাদশ সংসদের আগে নিবন্ধন পায় দুটি দল। ইসির বাছাই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন না পেলেও আদালতের আদেশে নিবন্ধন অব্যাহত রয়েছে। তবে নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় বেশ কয়েকটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়।