জাতিসংঘ সমর্থিত ক্ষুধা পর্যবেক্ষক সংস্থা গত শুক্রবার গাজায় দুর্ভিক্ষপীড়িতের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি উল্লেখ করলেও মাত্র দুই দিনেই সে সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়াতে চলেছে। সেখানে শত শত শিশু না খেয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সূত্র : আল জাজিরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, গাজার দেইর-আল বালাহ অঞ্চলে বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে একটি তাঁবুতে শুয়ে আছে হুদা আবু নাজা। ১২ বছরের এ ফিলিস্তিনি শিশুর হাত-পা হাড়ের খাঁচায় পরিণত হয়েছে। শরীরের হাড়গুলো চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসছে, যা তীব্র অপুষ্টিরই স্পষ্ট লক্ষণ। শিশুটির মা সোমিয়া আবু নাজা বলেন, ইসরায়েল গাজার সীমান্ত বন্ধ করার পর থেকে মার্চ থেকেই আমার মেয়ে মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। তিন মাস হাসপাতালে ছিল, কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি জানান, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে পাঁচ শিশুকে না খেয়ে মরতে দেখার পর তিনি মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। আগে তার মেয়ের ওজন ছিল ৩৫ কেজি (৭৭ পাউন্ড), এখন নেমে এসেছে ২০ কেজিতে (৪৪ পাউন্ড)। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, হুদা আবু নাজার মতো গাজার বহু শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। ইসরায়েল খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ আটকে রাখায় পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি অবরোধ শুরুর পর প্রায় দুই বছরে ২৮০ জনের বেশি মানুষ অনাহারে মারা গেছে, যাদের মধ্যে ১১০ জনেরও বেশি শিশু। আইপিসি জানিয়েছে, শিশুদের ওপরই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে। শুধু পাঁচ বছরের নিচে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু ২০২৬ সালের জুন নাগাদ মারাত্মক অপুষ্টিতে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের প্রধান শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আহমাদ আল-ফাররা বলেন, সেখানে বর্তমানে ১২০ শিশু অপুষ্টিতে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন। কিন্তু শরণার্থী শিবিরগুলোতে আরও কয়েক হাজার শিশু পর্যাপ্ত চিকিৎসা ছাড়াই কষ্ট পাচ্ছে। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, গাজাজুড়ে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব আহত রোগীও অপুষ্টিতে ভুগছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) সতর্ক করে বলেছে, দুর্ভিক্ষপীড়িতের সংখ্যা বেড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে। এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইপিসির এই দুর্ভিক্ষ তথ্যকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই। তবে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের মুখে গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েল সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ সরবরাহ অপ্রতুল এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়।
পশ্চিম তীরে গাছ ধ্বংস : অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে একটি গ্রামে ইসরায়েলি সেনারা প্রায় ৩ হাজার জলপাইগাছ উপড়ে ফেলেছে। এখানে প্রায় ৪ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রাম পরিষদের উপপ্রধান মারজুক আবু নাইম ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফাকে বলেন, গত শনিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি সেনারা ৩০টির বেশি বাড়িতে ঢুকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পদ এবং গাড়ি ধ্বংস করেছে। সূত্র জানায়, ‘যে এলাকা থেকে ৩ হাজারের বেশি জলপাইগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে, সেটি রামাল্লা অঞ্চলের সবচেয়ে উর্বর ভূমিগুলোর একটি। গাছ কেটে ফেলা, পানির উৎস দখল, ফিলিস্তিনিদের খামার ও পানির উৎসের কাছে যেতে বাধা দেওয়ার মানে হলো- তাদের খাদ্য ও পানির অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে যাওয়া।’
আরও ৬৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা : গত শনিবার ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরীর ভিতরে আরও অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে তারা। এদিন সকালে খান ইউনিসের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল আসদা এলাকায় বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবুতে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জন শিশু।