২৭ মে, ২০২৪ ১৫:৫৪

এক্সোফথ্যালমস : চোখের থাইরয়েডজনিত সমস্যা

ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ

এক্সোফথ্যালমস : চোখের থাইরয়েডজনিত সমস্যা

ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ

অনেকের চোখে থাইরয়েডজনিত সমস্যা হয়। একে বলা হয় থাইরয়েড আই ডিজিজ। বিশেষ করে হাইপারথাইরযেড হলে চোখ ও আক্রান্ত হতে পারে।প্রাথমিক পর্যায়ে চোখে খচ খচ করতে পারে,চোখ লাল হতে পারে, পানি পড়তে পারে, ডিল্পোপিয়া বা ডবল ভিশন হতে পারে। একটা পর্যায়ে প্রোপ্টোসিস বা চোখ বড় দেখা যেতে পারে। মনে হবে চোখ কোঠর থেকে বের হযে আসছে। এটাকেই এক্সোপথালমস বা প্রোপটোসিস বলা হয়।এই পর্যায়ে ভাল চিকিৎসা না হলে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে বা চোখ তুলেও ফেলা লাগতে পারে। দু'চোখেই সমস্যা দেখা দেখা দিতে পারে।  

এটা অটো ইমিউন রোগ। যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে। রক্তে থাইরযেড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে এমনটা হয়। পুরুষের চেয়ে মহিলার এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। সাধারনত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে এই রোগের আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গত ২৫ মে থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে সেমিনার বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা kora hoese।  আসুন থাইরয়েড কে জেনে নিই, সচেতন হই। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিলো-  ”থাইরয়েড গ্রন্থির রোগসমূহ স্যক্রামক ব্যাধি নয়”।

থাইরয়েডের সাধারন লক্ষণ-

হরমোন জটিলতার জন্য সারা দেহে যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো ওজন কমে যেতে পারে। এমনকি খাবার ঠিকমত খাওয়ার পরও এমনটা হতে পারে। শরীর অত্যাধিক ঘাম হয়। হাতের তালু প্রায়শই ভিজে যায় এবং গরম অসহ্য লাগে। নার্ভাসনেস, খিটমিটে লাগা, দুর্বলতা ও ক্লান্তি লাগে। কখনো কখনো বুক ধরফর করে। পালস রেট বেড়ে যায়। 

চোখের লক্ষণ-

আগে যেটা বলা হয়েছে যেমন চোখ  খচ খচ করা, লাল হওয়া,চোখ জ্বলা এমনকি চোখ দিয়ে পানিও পড়তে পারে।একটা পর্জায়ে প্রোপটোসিস বা এক্সোপথামাস হয়। প্রোপ্টোসিস এক বা দুই চোখে হয়। ডিপ্লোপিয়া বা ডাবল ভিশন হতে পারে। দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়। চোখের প্রেশার বেড়ে যায় যাকে বলে সেকেন্ডারি গ্লুকোমা। চোখের দুই পাতি এক হতে পারে না যাকে বলে ল্যাগোপথালমস। এজন্য এক্সপোজার কেরাটোপ্যাথি হয়।

কিভাবে বুঝবেন? 

হরমোন এনালাইসিস – টিএসএইচ, থাইরয়েড হরমোন টি ৩ ও টি ৪, থাইরয়েড বাইন্ডিং গ্লোবিউলিন ইতাদি পরিমাপ করে থাইরয়েড অবস্থায় বোঝা যায়।  চোখের সার্বিক অবস্থা বোঝার জন্য চোখের কোঠরের আল্ট্রাসনোগ্রাম , সিটি স্ক্রান ও এমআরআই করা যেতে পারে। চোখের পেশার ও বিজুয়েল ফিল্ড করারও প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা-

থাইরয়েড হরমোনের চিকিৎসা একজন মেডিসিন বা হরমোন বিশেষজ্ঞর কাছে করতে হবে। স্বল্প মাত্রার প্রোপ্টোসিস- আর্টিফিসিয়াল টিয়ার সাথে প্রয়োজনে হালকা একটু স্টেরোয়েড ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। মাঝারি ধরনের প্রোপ্টোসিস- ঘুমানোর সময় বা অন্য  সময় চোখ পুরোপুরি বন্ধ না হলে সেক্ষেত্রে কর্নিয়ায় ঘা বা এক্সপোজার কেরাটাইটিসের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ফলে চোখে ঘন ঘন আর্টিফিসিয়াল টিয়ার ব্যবহার করতে হয়। প্রয়োজনে ঘুমানোর সময় মলম বা জেল জাতীয় আর্টিফিসিয়াল টিয়ার ব্যবহার করতে হয়। তীব্র ধরনের প্রোপ্টোসিস হলে চোখে দেখতে সমস্যা দেখা দিলে বা ডাবল ভিশন সমস্যা হলে স্টেরয়েড ইমিউনো সাপ্রেসিভ ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হয়।  এছাড়া অনেক সময় রেডিওথেরাপি বা অপারেশনের প্রয়োজন দেখা দেয়। চোখের প্রেশার বেশি হলে তা কমানোর জন্য ড্রপ দেয়া হয়।

প্রোপ্টোসিস ঠিক হতে এক থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। তারপরও অনেক সময় এটি নিয়ন্ত্রনে আসে না। প্রোপ্টোসিস নিয়ন্ত্রনে আসলেও অনেক সময় স্থায়ী  ডিপ্লোপিয়া বা ডাবল ভিশনের সমস্যা সৃষ্টি করে। ডাবল ভিশনের জন্য তখন আলাদা অপারেশনের প্রয়োজন হয়। তবে তা ফ্যাকো ও গ্লুকোমা  বিশেষজ্ঞ সার্জন এর পরামর্শ নিয়ে করা ভালো। 

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ( ফ্যাকো ও গ্লুকোমা সার্জন ), নির্বাহী পরিচালক ও পরামর্শক,

বাংলাদেশ আই হসপিটাল মিরপুর লি:, ঢাকা। ০১৮৩৪৯৬৪৮৬৩

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর