বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে লাখো মানুষ

প্লাবিত ধানের জমিতে আড়াই হাজার কোটি টাকার মাছ

উৎপাদিত হয় রুই, মৃগেল, কাতলা, সিলভার কার্প, সরপুঁটি, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের রঙিন মাছ। ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে মাছের হিমাগার প্রয়োজন

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

প্লাবিত ধানের জমিতে আড়াই হাজার কোটি টাকার মাছ

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা। এখানের প্লাবন ভূমিতে দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করা হয়। যা বর্তমানে সারা দেশে একটি মডেল। দাউদকান্দিতে ধান খেতে বর্ষা মৌসুমে মাছ ও শুকনো মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। দাউদকান্দির ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-সংলগ্ন ইলিয়টগঞ্জ, আদমপুর, পুটিয়া, রায়পুর, সিংগুলা, লক্ষ্মীপুর, সুহিলপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে মৎস্য প্রকল্প। ১১৫টি মৎস্য প্রকল্পে প্রতিবছর উৎপাদন হচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকার মাছ। এখানে উৎপাদিত হয় রুই, মৃগেল, কাতলা, সিলভার কার্প, সরপুঁটি, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের রঙিন মাছ। ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে মাছের হিমাগার প্রয়োজন। প্রয়োজনে যেন মাছ জমা রাখা যায়। এ ছাড়া সহজ শর্তে ঋণ পেলে মাছের উৎপাদন বাড়বে।

সকালে সরেজমিন দেখা যায়, পাইকারদের মাছ মেপে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মাছে সকালের মিষ্টি আলো পড়ে চকচক করছে। লাফালাফি করছে তাজা মাছ। চলছে হাঁকডাক। নগদ টাকায় মাছ বিক্রি করে খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানযোগে মাছ চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

স্থানীয় সূত্র মতে, জলাবদ্ধতার কারণে জমি বছরে আট-নয় মাস খালি পড়ে থাকত। এ এলাকায় এক ফসলের বেশি হয় না। এই জলাবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে মাছ চাষ করা হয়। ১৯৮৬ সালে প্রথম প্লাবনভূমিতে মৎস্য চাষ করেন উপজেলার বানুয়া খোলা গ্রামের সুনীল কুমার রায়। তার     দেখাদেখি অন্যরাও এগিয়ে আসেন। এতে এলাকার বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এই মাছ উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত লাখো মানুষ। সারা দেশে মাছ চাষে কুমিল্লা দ্বিতীয়। কুমিল্লার মধ্যে প্রথম দাউদকান্দি উপজেলা। এখানে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয় ২ লাখ মেট্রিক টন মাছ।

হিমালয় প্রকল্পের পরিচালক আলী আহমদ মিয়াজী বলেন, তিনি একাধিক প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত। তার সঙ্গে ৪০০ মানুষ কাজ করেন। অন্য প্রজেক্টের লোকজন পরামর্শের জন্য এলে তিনি সহযোগিতা করেন। জেলায় তিনি তৃতীয় বারের মতো শ্রেষ্ঠ মাছচাষির পুরস্কার পেয়েছেন। এখানে প্রতিবছর আড়াই হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হয়।

তিনি মনে করেন, মরা খালগুলো খনন হলে প্লাবনভূমির পানি সরানো যাবে। প্রয়োজনে পানি প্রবেশ করানো যাবে। মাছের হিমাগার প্রয়োজন। প্রয়োজনে যেন মাছ জমা রাখা যায়। এ ছাড়া সহজ শর্তে ঋণ পেলে মাছের উৎপাদন বাড়বে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। 

দাউদকান্দি উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াছমিন চৌধুরী জানান, দাউদকান্দিতে শতাধিক মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। শিক্ষিত বেকার যুবকরাও মাছ চাষে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, এতে বেকারত্ব কমছে। এই প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর