বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দিনাজপুর থেকে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে

পাটজাতপণ্য

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

দিনাজপুর থেকে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে

দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে একসময় ব্যাপক ভূমিকা ছিল পাটের। এ কারণে তার নাম হয়েছিল ‘সোনালি আশ’। কিন্তু দিন দিন পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকে বাজার সয়লাব হওয়ায় পাটের অবস্থান ও মর্যাদা সবই হারাতে বসে। এর ফলে একে একে পাটকলগুলো বন্ধ হচ্ছে এবং হাজার হাজার মানুষ বেকার হচ্ছেন। অন্যদিকে দাম কমে যাওয়ায় পাট চাষে বিমুখ হয়ে পড়ছেন কৃষক।

কিন্তু সরকার কিছু পদক্ষপ আবারও পাটকলসহ চাষিদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আর এই স্বপ্নকে নিয়ে গড়ে উঠেছে সারা দেশের মতো দিনাজপুরেও ছয়টি পাটকল। আর কৃষিনির্ভর দিনাজপুরের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই পাটকলে। পাটের চাহিদা বাড়ায় পাট চাষে আবার উৎসাহিত হচ্ছেন কৃষক। পাচ্ছেন পাটের ন্যায্যমূল্য। আবার পাট একটি সম্ভাবনাময় ফসল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পাটজাতপণ্য দিনাজপুর থেকে ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তবে সরকারের সহযোগিতা পেলে এটি আরও বেশি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবেশ দূষণ রোধে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে ও পাটজাত পণ্য ব্যবহারে সরকারের প্রচার-প্রচারণাসহ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ, দেশে-বিদেশে পাটজাত পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দেশে ধান, চাল, চিনিসহ ১৭টি পণ্য বাজারজাতকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের তদারকি থাকতে হবে বললেন সংশ্লিষ্ট পাটকল মালিক এবং বস্তা ব্যবসায়ীরা। দিনাজপুরের পাটকলগুলোতে হেশিয়ান ব্যাগ (পাতলা ব্যাগ), শেকিং ব্যাগ (মোটা ব্যাগ), সুতলি ও সুতা উৎপাদন হয়। সুতলি যাচ্ছে বিভিন্ন হস্তজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। তবে এসব পাটকলের উৎপাদিত বস্তা, সুতা দেশ-বিদেশের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে।

করোনাকালের গত দুই বছরে পাটগুলোর ব্যবসা খারাপ হওয়ায় বন্ধের উপক্রম হয়।

ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধে হিমিশিম খাচ্ছেন তারা। এই ছয়টি পাটকলে প্রত্যক্ষ ১২ হাজার এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ  নির্ভরশীল। সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষিভিত্তিক দিনাজপুরে প্রতি মাসে পাটের বস্তার চাহিদা রয়েছে প্রায় ২ কোটি। কিন্তু পাটকলগুলোতে স্থানীয় বাজারের জন্য কোনো পাটের বস্তাই তৈরি করেননি বলে জানান। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে চাল, আটা, ময়দা, ফিড, আলু, পিঁয়াজ,  ময়দাসহ সরকার ঘোষিত ১৭টি পণ্যের বাজারজাতকরণে পাটের বস্তা ব্যবহারের কথা থাকলেও পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক বস্তা ব্যবহার হচ্ছে।

সরকারের তদারকির অভাবে দিনাজপুরের সর্বত্র ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের বস্তা। এটি কে দেখবে কেউ বলতে পারছেন না। বিষয়টি বিভিন্ন ফোরামে পাটকল মালিক ও বস্তা ব্যবসায়ীরা বললেও কাজ হচ্ছে না বলে জানান তারা। পাটকলগুলোর উৎপাদিত পাটের বস্তা, সুতলির ব্যবহার যদি নিশ্চিত হয় এবং বিদেশে রপ্তানির আরও সুযোগ সৃষ্টি হয় তাহলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাবে। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ থেকে রেহাই পাবে মানুষ। তখনই পাটের হারানো গৌরব আবার ফিরে আসবে। দিনাজপুর আনাম জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দিনাজপুর চেম্বারের সহ-সভাপতি জর্জিস আনাম জানান, এ পাটকলের সুতা ও বস্তা ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, দুবাই, রাশিয়া এসব দেশে রপ্তানি করা হয়। সবশেষ গত এপ্রিলে পাটের বস্তা এবং সুতা ভিয়েতনামে রপ্তানি করা হয়েছে। পাটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন দেশে।

সর্বশেষ খবর