ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দুইজনের যুগলবন্দি পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে বড় বিপজ্জনক বলে অবিহিত করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। এই দুই অহংকারী শক্তি গণতন্ত্রের পক্ষেও বিপজ্জনক বলে মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ক্যানিংয়ে এক নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দিয়ে মোদি ও মমতাকে একযোগে তোপ দেগে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার যে পথে সরকার পরিচালনা করছে তা ভারতের গঠনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের পক্ষেও বিপজ্জনক। পাশাপাশি বহু বছরের পুরোনো ভারতের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির পক্ষেও তা শুভ নয়। এই দুইয়ের কোন একজন ক্ষমতায় আসলে তা পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে বড় বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে।
পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকারকে নিশানা করে সোনিয়া বলেন, ‘মমতা একসময় মানুষের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাই ২০১১ সালের ভোটে মমতাকে আমরা সমর্থন করি। আমরা তাঁকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি মমতা। ক্ষমতায় এসে সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন, রং বদলে ফেলেছেন মমতা’।
সোনিয়া বলেন, ‘মমতার আমলে এ রাজ্যে শিল্পে বেহাল অবস্থা। রাজ্যর আইন বলে কিছু নেই। আদিবাসী, দলিত-পীড়িত মানুষদের ওপর অত্যাচার চলছে। কৃষক আত্মহত্যা করছে। চারিদিকে দুর্নীতি আর অত্যাচার। রাজ্যে কর্মসংস্থানের কোন চিহ্ন নেই। এখানকার যুবকরা চাকরির খোঁজে অন্য রাজে চলে যাচ্ছেন। উড়ালপুল ভেঙে পড়ছে। রাজ্যকে দুষিত করেছে তৃণমূল। রাজ্যের পরিস্থিতি কঠিন করে দিয়েছে তৃণমূল। তাঁর প্রশ্ন একেই কি আমরা উন্নয়ন বলি?
চাল উৎপাদনের বাংলা শীর্ষ স্থানে ছিল কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর একটি একটি করে রাইস মিল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ রাজ্যের মানুষ দুই মুঠো ভাতের জন্য হাহাকার করছে। রাজ্যটির এই অবস্থার জন্য মমতা ও মোদির যুগলবন্দিকে দায়ী করে তিনি বলেন, তাদের জন্যই আজ বাংলার এই অবস্থা।
কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রে যখন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় ছিল, সেসময় মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এমজিএনআরইজি) প্রকল্প চালু হয়েছিল। তার ফল গোটা দেশের মানুষ কাজ পেয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও প্রতি বছর তিন লাখ মানুষ এই প্রকল্পে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। এর কারণ হল এ রাজ্যের মানুষের কর্মসংস্থান নেই। তাঁর অভিযোগ, মোদি ও মমতা যে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিতেন সেটা যে কত বড় মিথ্যা এটাই তার প্রমাণ। চাল, ডাল, সবজি প্রতিটি জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ মোদি হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। তিনিও অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তার থেকে সাবধানে থাকবেন।’
মোদির একটি বক্তব্য উদ্ধৃতি করে সোনিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলে থাকেন যে গত ৬০ বছরে কংগ্রেসের শাসনকালে ভারতে কোন উন্নয়নই হয়নি, মোদির দুই বছরেই যাবতীয় উন্নয়ন হয়েছে’। কিন্তু আমি বলতে চাই যে কংগ্রেস এই দেশের সংবিধানকে শক্তিশালী করেছে, গঠনতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছে’।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ এপ্রিল পঞ্চম দফায় পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা (৩১), কলকাতা (৪) এবং হুগলির (১৮) ৫৩ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বিডি-প্রতিদিন/২৬ এপ্রিল, ২০১৬/মাহবুব