মৃত গরুর চামড়া ছাড়ানোর অভিযোগে দুই দলিত সহোদরকে নগ্ন করে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রচণ্ড মারধরের অভিযোগ উঠল ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে। মঙ্গলবার সকালের দিকে এই ঘটনাটি ঘটেছে রাজ্যটির আমলাপুরমে।
ডেপুটি পুলিশ সুপার এল আঙ্কাইয়া জানিয়েছেন সোমবার রাতে স্থানীয় একটি মাঠে চড়ার সময় তড়িদাহত হয়ে একটি গরুর মৃত্যুর পর ওই গরুর মালিক স্থানীয় করাত কল মালিক বি অরবিন্দম মৃত গরুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য মোকাতি এলিসা (৫৬) এবং তার ভাই মোকাতি ভেঙ্কটেশ্বরা রাও (৫৩)-কে ভাড়া করে নিয়ে আসে।
এরপর এলাকার একটি ভাগাড়ে মৃত গরুটিকে নিয়ে গিয়ে ওই দুই ভাই চামড়া ছাড়ানোর সময় আচমকাই আটজন যুবক তাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় দুই ভাইকে প্রথমে নগ্ন করে একটি নারকেল গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। এরপর লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। ঘটনার সময় স্থানীয় এক সিএনজি চালক সভারম লাভন কুমার দলিত ভাইকে বাঁচাতে এলে ছাড় দেয়া হয়নি তাকেও।হামলাকারীদের অভিযোগ, দুই দলিত যুবকই গরু চুরি ও গো হত্যার সঙ্গে জড়িত।
মারধরের পর ওই ৮ হামলাকারী ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে গেলে ওই সিএনজি চালক পুরো ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। এরপরই ডেপুটি পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। আহত দুই ভাইকে আমলাপুরম সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে এক ভাইয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
হামলার অভিযোগে বুরাঙ্কি নারায়ন রাও, রাজুলাপুড়ি গঙ্গাধর রাও, কামনা দুর্গা রাও, রাজুলাপুড়ি নরেশ, বাকা প্রসাদ, রাজুলাপুড়ি গণেশ, এরুবাড়ি আবুল্লু এবং ভাকা গোপীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দলিতদের আটক করে রাখার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির আদিবাসী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত মাসে গুজরাটের রাজধানী আমেদাবাদ থেকে তিনশ' কিলোমিটার দূরে উনা জেলায় গো-হত্যার অভিযোগে ৪ দলিত যুবককে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় গোরাক্ষা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে। মৃত গরুর চামড়া কাটার অভিযোগে ওই চার দলিতকে মারধরের পাশাপাশি তাদেরকে নগ্ন করে গাড়ির পিছনে বেঁধে কয়েক কিলোমিটার নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর সতর্ক বার্তা হিসাবে ওই ভিডিওটি সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করে দেওয়া হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষরা। ভারতে সংসদেও এই বিষয়টি নিয়ে উত্তাল হয়।
গরুকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে দলিতদের ওপর হামলকারীদের উদ্যেশ্যে কড়া বার্তা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত সপ্তাহেই তেলেঙ্গানা থেকে মোদি বলেন, ‘আপনাদের যদি কোন সমস্যা থাকে, আপনারা যদি কারও ওপর হামলা করতে চান-তবে আমার ওপর হামলা করুন কিন্তু আমার দলিত ভাইদের ওপর নয়। আপনাদের যদি কাউকে গুলি করতে ইচ্ছা করে তবে আমাকে গুলি করুন, আমার দলিত ভাইদের ওপর করবেন না। তথাকথিত গোরক্ষকদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করারও ডাক দেন তিনি। কিন্তু মোদির সেই বার্তার পরও হামলাকারীরা যে একটুও শোধরায় নি তা এই ঘটনাতেই পরিষ্কার।
বিডি-প্রতিদিন/ ১০ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ