১৬ বছরের অনশন ভাঙছেন বলে যত আলোচনা, তারচে' বেশি তার প্রেমকে নিয়েই বেশি আগ্রহী চারপাশের মানুষ। অথচ সেই সেই প্রেমিকেরই পাত্তা নেই। ইরম শর্মিলা চানুর মেইলের কোনো জবাবই নাকি দিচ্ছেন না ডেসমন্ড।
অনশন ভাঙার পর আপাতত হাসপাতালেই থাকছেন শর্মিলা। তবে এখন আর কয়েদি হিসেবে নয়, রাজ্য সরকার তাকে সেখানে থাকার অনুমতি দিয়েছে। অনশন ভেঙে বিয়ে করতে চাওয়া শর্মিলাকে মণিপুরবাসী থাকার জায়গা দেয়নি। ভাই সিংহজিৎ অবশ্য জানিয়েছেন, বাড়ির দরজা বোনের জন্য সবসময় খোলা। কিন্তু বোনই আফস্পা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি আসবে না বলে জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনো নিয়ম না থাকলেও বিচারাধীন রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য নির্দিষ্ট কেবিনে রাজ্য সরকার শর্মিলাকে থাকতে দিয়েছে- যা শর্মিলার কাছেও গ্লানির। কারণ প্রতিবার ছাড় পেলেই তিনি চলে যেতেন হাসপাতালের অদূরে শর্মিলা কানবা লুপের শিবিরে। কিন্তু শর্মিলা অনশন ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে দেড় দশকের সেই শিবির। নামিয়ে ফেলা হয়েছে শর্মিলার নাম।
অবশ্য আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটি এ দিন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ভবনে চানুকে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ডাক্তারদের বক্তব্য চানুর শরীর এখনও স্বাভাবিক নয়। বাইরের জীবন, খাওয়া-দাওয়ার অভ্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালেই রাখা হবে। বাধ্য হয়েই তা মেনে নিয়েছেন শর্মিলা।
হাসপাতালে বসে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শর্মিলা জানিয়েছিলেন, ডেসমন্ডের প্রেম, ডেসমন্ডের মার খাওয়াই তাকে অনশন ভাঙা ও আন্দোলনের ধারা বদলে প্রভাবিত করেছিল। মণিপুরবাসী শেষ পর্যন্ত তাকে সঙ্গ না দিলে গোয়া জাত ব্রিটিশ নাগরিক ডেসমন্ড কুটিনহোর সঙ্গে বিদেশে পাড়ি দেবেন। শেষ খবর পেয়েছেন ডেসমন্ড এখন আয়ারল্যান্ডে আছেন। এখন মণিপুরের পরিস্থিতি যা অগ্নিগর্ভ তাতে ডেসমন্ড সেখানে পা রাখলে ফের আগের বারের মতোই মার খেতে পারেন।
কিন্তু তা বলে প্রেমিকার এত বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ যার জন্য, সেই প্রেমিক অন্তত ই-মেইল বা ফোনে তো যোগাযোগ করতে পারতেন। কিন্তু শর্মিলা জানান, ওপার থেকে কোনো সাড়া আসছে না। শর্মিলার ভাই সিংহজিৎ বারবার বলেছেন, ডেসমন্ডকে কাজে লাগিয়েছে ‘র’ ও ভারত সরকার। প্রেমের প্রলোভনে শর্মিলার মন বিক্ষিপ্ত ও বিপথে পরিচালিত করতেই প্রেমের নাটক করেছিলেন ডেসমন্ড। শর্মিলা অবশ্য বরাবরই একরোখা ছিলেন প্রেমের ব্যাপারে। কিন্তু অনশন ভাঙার পরে প্রেমিকের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া আপাতত ৪৪ বছরের শর্মিলাকে বেজায় চিন্তার রেখেছে। শর্মিলার শুভানুধ্যায়ীরা আশঙ্কা করছেন ডেসমন্ড সাড়া না দিলে শর্মিলার দু’কুলই যাবে। ওই অবস্থায় আদৌ রাজনৈতিক লড়াই চালানোর মতে মানসিকতা তার নাও থাকতে পারে। আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিডি-প্রতিদিন/ ১১ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ