ভারতে ৫০০, ১০০০ রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় দেশটির জাতীয় কংগ্রেস ও পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস-দুই দলই পরস্পরের অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। গত ৮ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরই সবার প্রথমে আন্দোলনে নামেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। আর তাকে সমর্থন জানায় কংগ্রেস। নোট বাতিল ইস্যুতে মোদি বিরোধিতার সুর চড়াতে রাজ্য ছেড়ে দিল্লি গিয়ে আন্দোলন-মিছিলে অংশ নেন মমতা। সঙ্গে পেয়েছিলেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে। কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই, হাতে হাত মিলিয়ে দিল্লিতে লড়াই করছে অ-বিজেপি এই দুই দল। এমনকি নোট বাতিল ইস্যুতে দিল্লিতে একসঙ্গে বসে সংবাদ সম্মেলনও করেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা।
সম্প্রতি বেআইনি অর্থলগ্নীকারী সংস্থা ‘রোজভ্যালি’র আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিবিআই’এর হাতে তৃণমূল সংসদ সদস্য সুদীপ বন্দোপাধ্যায় আটক হওয়ার পর দিল্লিতে কংগ্রেসের পক্ষে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূলের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু দিল্লিতে কংগ্রেস-তৃণমূলের 'বন্ধুত্বপূর্ণ' সম্পর্ক থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা ঠিক উল্টো।
নোট বাতিল ইস্যু থেকে বেআইনি অর্থলগ্নীকারী সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের যুক্ত থাকা-প্রতিটি বিষয়েই আলাদা আলাদা আন্দোলন করছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। এমনকি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের নেতাদের আটক করার দাবি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্ব। কোন বিষয়েই রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে কোনরকম সহায়তা যে করা হবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। তারই অংশ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পীকার বিমান ব্যানার্জির ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক বয়কট করার ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের সিনিয়র বিধায়ক ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাজেট অধিবেশনের আগে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বিমান ব্যানার্জি যে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন সেই বৈঠকে আমরা (কংগ্রেস) যোগ দেবো না।''
তিনি আরও বলেন, গত বছর বিধানসভার নির্বাচন শেষে আমাদের পাঁচজন বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এ ব্যাপারে আমরা স্পীকারের কাছে ওই পাঁচ বিধায়কের সদস্যপদ বাতিল করার আর্জি জানিয়েছিলাম এবং আমরা জানতে চেয়েছিলাম যে তারা কংগ্রেস না তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু এই পাঁচ বিধায়কের বিরুদ্ধে স্পীকার এখনও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আমি নিজে গত ৫ জানুয়ারী স্পীকারকে চিঠি দিয়েছিলাম কিন্তু স্পীকার নীরব ভূমিকা পালন করছেন’।
নোট বাতিল ইস্যুতেও পৃথকভাবে আগামীকাল বুধবার কলকাতার রিজার্ভ ব্যাংকের সামনে সভা করতে চলেছে রাজ্য কংগ্রেস। এ বিষয়ে মান্নান জানান, ‘আমরা নোট বাতিলের বিপক্ষে কিন্তু একইসঙ্গে রাজ্যের যে বেআইনি অর্থলগ্নীকারী সংস্থাগুলো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে রুপি নিয়ে প্রতারণা করেছে সেই সংস্থাগুলোকে সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই। তৃণমূলের অনেক নেতাই এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত এবং সিবিআই বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। যে সব তৃণমূল নেতারা আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত তাদের সবাইকে আটক করতে হবে’।
বিডি-প্রতিদিন/১৭ জানুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব