ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ভোরে এই হামলা শুরু হয়। আজ বুধবার হামলার সপ্তমদিন। রাশিয়া-ইউক্রেনের এই যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ছয় দিনে রুশ সেনারা ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে অভিযান চালিয়েছে। এক যোগে বিভিন্ন দিক থেকে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরই মধ্যে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী শহর কিয়েভেও অভিযান শুরু করেছে। তবে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী ও দেশটির বেসামরিক নাগরিকরা কোথাও কোথাও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
এদিকে, রাশিয়া-ইংক্রেনের এই যুদ্ধে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চীন। বিষয়টি পরিষ্কার করার আগে প্রথমেই কয়েকটি সম্পর্কের দিকে তাকানো যাক।
১. রাশিয়ার সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং সেই সম্পর্ক রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকেও বেশ গভীর। ২. চীন ও রাশিয়া উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র। ৩. যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নেটোতে নিতে আগ্রহী। ৪. আর ইউক্রেনের সঙ্গে তো রাশিয়ার যুদ্ধই চলছে। ৫. এই ইউক্রেনের সঙ্গেও চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য।
কি, বেশ জটিল আর গোলমেলে মনে হচ্ছে?
ঠিক এরকমই এক কঠিন ধাঁধায় পড়েছে চীন। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের বিষয়ে চীনের অবস্থান কী হবে সেটা বেইজিং-এর জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক।
চীন সরকার ইউরোপে আরও একটি যুদ্ধ দেখতে চায় না। কিন্তু একই সাথে তারা রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও জোরালো করতে আগ্রহী।
মনে রাখতে হবে ইউক্রেনের এক নম্বর বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো অবকাঠামো প্রকল্পের রেলওয়ে এবং বন্দর নির্মাণে বেইজিং ও কিয়েভ একসাথে কাজ করছে।
এই দুটি দেশের সামরিক সম্পর্কও গভীর। যুদ্ধ জাহাজের গ্যাস টার্বাইন, বিমানের ইঞ্জিন, এমনকি চীনের প্রথম বিমানবাহী জাহাজ লিয়াওনিং কেনা হয়েছিল ইউক্রেনের কাছ থেকে।
এসব কারণে বেইজিং কিয়েভের সাথেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। কিন্তু এই চীনেরই ঘনিষ্ঠ রাশিয়া যখন ইউক্রেনে বিধ্বংসী সব হামলা চালাচ্ছে, তখন কিয়েভের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক উষ্ণ রাখা তো অবশ্যই কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।
চীনের অবস্থান কী
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে বলেছেন, চীন পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতাকে জোরালোভাবে স্বীকৃতি দেয় ও সমর্থন করে এবং ইউক্রেনও সেসব দেশের একটি।
এই বক্তব্যের জের ধরে কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ও সমর বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, “ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি চীনের সমর্থন সুদৃঢ়। চীন মনে করে একটি দেশের নিরাপত্তা অন্য কোনও দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে সুনিশ্চিত করা যায় না। কাজেই যেসব দেশের মধ্যে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা রয়েছে সেগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করতে হবে।”
ইউক্রেনের সীমান্তে এক লাখেরও বেশি রুশ সৈন্য মোতায়েন শুরু হওয়ার সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা চীনকে অনুরোধ করেছিলেন তারা যেন রাশিয়াকে ইউক্রেনের সামরিক অভিযান না চালানোর পরামর্শ দেন।
চীনা কর্মকর্তারা সেসময় এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনও সাড়া দেননি। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং টেলিফোন করে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বলেন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট সমাধান করা সম্ভব বলে চীন মনে করে।
জবাবে প্রেসিডেন্ট পুতিন চীনা প্রেসিডেন্টকে বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে প্রস্তুত। এর জের ধরেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বেলারুস সীমান্তে শান্তি আলোচনা শুরু হয়।
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন এই দুটি দেশকেই চীন সমর্থন করে এবং এ কারণে তারা এই যুদ্ধের ব্যাপারে খুব সূক্ষ্ম ও জটিল কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছে।
“চীন শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের কথা মেনে নেয়নি। তারা মনে করে রাশিয়া তাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেসব হুমকির কথা বলছে তার মধ্যে কিছুটা সত্যতা রয়েছে। একারণে রাশিয়ার প্রতি তাদের কিছুটা সহানুভূতিও রয়েছে,” বলেন তিনি।
তারা এও বলছে যে ইউক্রেন-রাশিয়ার এই সংকট যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোই দায়ী। এজন্য তারা রাশিয়ার সামরিক অভিযানের নিন্দা জানায়নি এবং রাশিয়ার এই অভিযানকে তারা ‘সামরিক আগ্রাসন’ বলতেও রাজি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের স্কুল অব সিকিউরিটি এন্ড গ্লোবাল স্টাডিজের অধ্যাপক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চীনকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ছুঁড়ে দিয়েছে।
“রাশিয়ার উপর আরোপিত ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার কী ধরনের প্রভাব চীনের অর্থনীতির উপর পড়তে পারে তা নিয়ে চীন খুব চিন্তিত। এর কারণ হচ্ছে অনেক রুশ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে যুক্ত। এছাড়াও ইউক্রেনের অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে চীনের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। এই সমস্ত বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়েও চীন উদ্বিগ্ন। ফলে যুদ্ধের কারণে চীনের অর্থনৈতিক ক্ষতি কী হবে সেটা তাদেরকে চিন্তিত করে তুলেছে,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এ কারণে চীন রাশিয়ার যুদ্ধকে সমর্থন না দিয়ে কূটনৈতিক পন্থায় সমস্যা সমাধানের উপর জোর দিয়েছে এবং রাশিয়ার ব্যাপারে তারা অত্যন্ত সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে চীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
“আন্তর্জাতিক বিশ্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অ্যাম্বিশন রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক। তারা চায় সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করতে। তারা চায় না তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হোক,” বলেন সাঈদ ইফতেখার আহমেদ।
তাইওয়ানে সামরিক অভিযান?
অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জের ধরে চীন এখন তাইওয়ান দখল করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। স্বশাসিত এই দ্বীপকে চীন তার নিজের দেশের অংশ বলেই মনে করে।
চীনা সামাজিক মাধ্যম ওইয়েবো, যা টুইটারের চীনা সংস্করণ, তাতে অনেক চীনা নাগরিক এও মন্তব্য করছেন যে ‘তাইওয়ানকে নিয়ে নেওয়ার জন্য এখনই শ্রেষ্ঠ সময়।’
এখন চীনা নাগরিকরা যদি রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে যৌক্তিক মনে করে এবং এই বিষয়টিকে নিজের দেশের জন্যেও প্রয়োগ করতে চায়, তখন কি চীন সরকার তাইওয়ানের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হতে পারে?
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যে সংকট এবং তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের যে সমস্যা- এ দুটিকে বেইজিং এক করে দেখছে না।
“চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের নিজস্ব ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু ইউক্রেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। অন্য একটি স্বাধীন দেশের ওপর আঘাত করার বিষয়টি চীন সমর্থন করে না। কিন্তু তাইওয়ানের বিষয়টা একেবারেই সেরকম নয়,” সৈয়দ মাহমুদ আলী।
বিশ্লেষকদের মতে, বেইজিং মনে করে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তাইওয়ান দখল করে নিলে তাদেরকেও হয়তো রাশিয়ার মতো ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হতে পারে।
“চীনের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে-এ রকম কোনও ঝুঁকিই চীন নিতে চায় না। রাশিয়া হয়তো এসব হিসাব-নিকাশ করেই ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে গেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে মস্কো এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ‘দুর্গ অর্থনীতি’ গড়ে তুলেছে। কিন্তু চীন তার ঐতিহাসিক কারণ, জনসংখ্যা, মাথাপিছু আয় ইত্যাদি নানাবিধ কারণে এরকম কোনও পরীক্ষায় যেতে চায় না এবং তার ফলে তারা তাইওয়ান দখলের মতো অ্যাডভেঞ্চারে যাবে বলে মনে হয় না,” বলেন যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ।
চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্ভব?
প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর রাশিয়াকে সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দেশটির ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে রাশিয়াকে বের করে দেওয়া থেকে শুরু করে বিমান চলাচলের জন্য আকাশ বন্ধ করে দেওয়া, এমনকি ফুটবল ও অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক খেলাধুলাতেও রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া।
এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তাইওয়ান দখল করে নিলে চীনের ওপর কি এরকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সম্ভব?
চীনের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নতুন কিছু নয়। ১৯৮৯ সালে তিয়েনানমেন চত্বরে রক্তক্ষয়ের পর থেকে চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিক- বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে এসব নিষেধাজ্ঞা আরও জোরালো এবং বিস্তৃত হয়েছে।
চীন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো যে এর পরেও চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না একথা বলা যাবে না। অতীতেও করেছে। হয়তো ভবিষ্যতেও করবে। এজন্য চীনা কর্তৃপক্ষ কিছুটা হলেও প্রস্তুত। চীন জানে তারা যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমস্ত শক্তি আরোপ করার চেষ্টা করছে। এখন হয়তো সেই উদ্যোগ তারা আরো একটু বাড়িয়ে দেবে।”
চীনের কাছে অর্থনীতি সবসময়ই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে এবং বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি দেশের সাথে তাদের অর্থনীতি যুক্ত। চীনের সবচেয়ে বড়ো বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এবং তার পরেই যুক্তরাষ্ট্র। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের শরিক দেশগুলোর সঙ্গে এই সম্পর্ক সম্প্রতি আরও জোরালো হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে চীনের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ কতটা সহজ হবে?
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, “চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে এসব দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ এসব দেশ প্রচুর চীনা পণ্য আমদানি করে এবং তারা নিজেরাও চীনে অনেক পণ্য রফতানি করে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে চীনের ক্ষতি তো হবেই। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের উপরেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।”
রাশিয়ার যুদ্ধে চীনের সুবিধা?
অনেকে বিশ্লেষক মনে করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে চীনের কিছু সুবিধা হতে পারে।
কারণ এর ফলে চীনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ মনোযোগ কিছুটা রাশিয়ার দিকে সরে গেছে।
ওয়াশিংটন ২০১৭ সাল থেকে বলে আসছে যে চীন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র।
জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন যাতে রাশিয়া ও চীন খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হতে না পারে। বর্তমানে জো বাইডেনও একই চেষ্টা করছেন।
চীন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, “যদি সম্ভব হয় রাশিয়াকে চীনের বলয় থেকে সরিয়ে তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সেরকম হলে চীনের উপর নজরদারি করা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আরও সহজ হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও নীতি নির্ধারকরা সতর্ক করে দিয়েছেন এই যুদ্ধের পর নেটোর মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। তবে তাদের মূল দৃষ্টি যেন কখনও চীনের ওপর থেকে সরে না যায়।
সম্প্রতি তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে একটি মার্কিন রণতরী অতিক্রম করে চলে যাওয়ার ঘটনা ওয়াশিংটনের এই অবস্থানকেই প্রমাণ করে যে চীনের প্রতি তাদের নজর এক বিন্দুও সরে যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদও এই যুদ্ধে চীনের তেমন একটা লাভ দেখছেন না।
তিনি বলেন, “তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর ছাড়া গণ চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে রাশিয়ার মতো আর কোনো অ্যম্বিশন নেই। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চীনের ব্যাপারে মার্কিন নীতিতেও কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি।”
“লাভের বদলে বরং ক্ষতি হবে কি না তা নিয়েই বরং চীন উদ্বিগ্ন। রাশিয়ার ওপর বিপুল যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, চীনের বাণিজ্যের ওপর তার কী ধরনের প্রভাব পড়বে সেটাই তাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে,” বলেন সাঈদ ইফতেখার আহমেদ।
তবে সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন এই যুদ্ধের ফলে চীনের যে উপকার হতে পারে তা হচ্ছে- রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক তৈরি হওয়ার যে সামান্য সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল সেসব চেষ্টা কয়েক বছরের জন্য একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।
ফলে রাশিয়া একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য চীনের দিকেই ঝুঁকে থাকবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/কালাম