লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের ভয়াবহতা অব্যাহত থাকার মধ্যেই শুরু হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক অর্থ-সহায়তা বিতরণের কাজ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার ওভাল অফিসে এক ব্রিফিংয়ে জানান যে, আগুনের লেলিহান শিখা কখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে তার অপেক্ষা না করে যারা নিঃস্ব হয়েছে তাদের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য-সামগ্রী (পানি, শিশু খাদ্য, ওষুধ ইত্যাদি) ক্রয়ের জন্যে মাথাপিছু ৭৭০ ডলার করে বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ ৬ হাজার মানুষের আবেদন জমা হয় এবং প্রথম দিনেই ৫.১ মিলিয়ন ডলারের মত বিতরণও করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দাবানল শুরুর পরই ৮ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে সর্বশান্ত হওয়াদের মধ্যে ফেডারেল সহায়তা প্রদানের বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সোমবার রাতের তথ্য অনুযায়ী দাবানলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রচন্ড বেগে আরেক দফা বাতাস বইতে পারে। অর্থাৎ আবারো জ্বলবে জনপদ, সাবাড় হবে বৃক্ষরাজি। ঝড়ো এই বাতাসের হুমকির মুখে লাল পতাকা সতর্কতা জারি করেছে জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা, যা সাধারণত ‘বিশেষভাবে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে’ জারি করা হয়।
আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি নিয়ে পূর্বাভাস প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থা ‘আকু ওয়েদার’র প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী দাবানলের কারণে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ক্ষতির পরিমাণ ২৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৭৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে। দাবানলের ভয়াবহতা বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সকল সহযোগিতার ঘোষণাও রয়েছে হোয়াইট হাউজের। শুধু তাই নয়, সামনের ৬ মাসের মধ্যে যতবার দাবানলের উদ্ভব হবে ততবারই ক্ষতিগ্রস্তরা পুনর্বাসনের সহায়তা পাবে বলেও হোয়াইট হাউজের ঘোষণায় উল্লেখ রয়েছে। শুধু তাই নয়, আগুন নেভানো/নিয়ন্ত্রণের জন্যে যত ব্যয় হবে সেটিও বহন করবে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ৩৩ হাজার মানুষের আবেদন পাওয়ার কথা জানায় ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বিপজ্জনক তীব্র ঝড়ো বাতাস আবারো ফিরে আসতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এই বাতাস দাবানল আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে দুটো জায়গায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা এতে ব্যাহত হতে পারে। তিনটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পরিষেবা তাদের পূর্বাভাসে জানায়, স্যান্টা অ্যানা বাতাস আবার সোমবার থেকে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৭০ মাইল বেগে বইতে শুরু করেছে, বুধবার পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র বলেছেন, ঝড়ো বাতাস পুরোপুরি ফিরে আসার আগেই জরুরি সব প্রস্তুতি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ওদিকে, হার্স্ট-এ পুড়েছে ৭৯৯ একর। তবে সেখানকার আগুনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বড় এই দাবানলগুলো নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করার মধ্যেই কর্তৃপক্ষ নতুন করে বিপজ্জনক বাতাস ফেরার সতর্কবার্তা দিয়েছে। এ বাতাস হতে পারে বিপর্যয়কর। এতে গোটা লস অ্যাঞ্জেলসই দাবানলের হুমকির মুখে পড়েছে। প্যাসাডেনার দমকল বিভাগের প্রধান চাদ অগাস্টিন বলেন, “আমরা হয়ত আবার বিপর্যয়ের মুখে পড়তে চলেছি। কারণ, মঙ্গলবার বাতাসের গতি সর্বোচ্চ হতে পারে।”
এরই মধ্যে আগুনে সম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নিউসম এ পর্যন্ত অন্তত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি বলেন, ফিরে আসার পূর্বাভাস থাকা ঝড়ো বাতাসে আর্দ্রতা খুবই কম থাকায় লস অ্যাঞ্জেলেস জুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে অনেক বেশি। লস এঞ্জেলস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি আগুন নেভানোর কাজে সহায়তার জন্য ন্যাশনাল গার্ডের আরও সদস্য চেয়েছেন। চারশ’সদস্য এর মধ্যেই কাজ করছে।
মঙ্গলবার ভোরে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দাবানলের থাবায় প্যালিসেডসের আগুন ১৪% নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এরইমধ্যে পুড়ে ছাই হয়েছে ২৩৭০০ একরের বসতবাড়িসহ বৃক্ষরাজি ও ঐতিহাসিক সব স্থাপনা। মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৮ জনের। লস অ্যাঞ্জেলেস দমকল বাহিনীর প্রধান ক্রিস্টিন ক্রোউলি জানান যে, শুরু থেকে সোমবার পর্যন্ত ৫৩০০টি স্থাপনা পুড়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস সিটির পূর্বদিকে প্যাসাডোনার সন্নিকটে ইটনের আগুন ৩৩% নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ১৬ জন। ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলের ইতিহাসে এটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানীর রেকর্ড। এখানকার ১৪১১৭ একরের বৃক্ষ এবং স্থাপনাসহ বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়েছে।
হার্স্টে আগুনের লেলিহান শিখা ৯৭% নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সান ফার্নান্দোর সন্নিকটে অর্থাৎ লসএঞ্জেলেস সিটির উত্তরের এই জনপদে ৭৯৯ একর ভূমির বাড়ি-ঘরসহ গাছপালা পুড়েছে।
অটো এলাকার আগুন সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে দমকল কর্মীরা সর্বাত্মক চেষ্টায় আছেন বলে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল